প্রতি বছরই কাজের মূল্যায়ন করতে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিদায়ি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরের অনুসন্ধান তদন্তের ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে সংস্থাটি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তা এখনও প্রকাশ করেনি। বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত এক বছর দুদকে ১৫ হাজার ৪৩৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে ৮৪৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করেছে সংস্থাটি, যা মোট অভিযোগের মাত্র ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। একই বছরে কমিশনে আসা প্রাপ্ত অভিযোগের ৯৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ অনুসন্ধানের জন্য আমলেই নিতে পারেনি দুদক। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে দুদকে জমা অভিযোগ ও অনুসন্ধানের পরিসংখ্যান বলছে, এই অর্ধযুগে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অভিযোগ জমা পড়েছে ২০২৩ সালে। এই পাঁচ বছরের মধ্যে করোনা অভিঘাতের পর সবচেয়ে কম অভিযোগ জমা পড়েছিল ২০২১ সালে। সে বছর ১৪ হাজার ৭৮৯টি অভিযোগ জমা পড়ে। দুদক সংশ্লিষ্টরা অনুসন্ধানের জন্য কম অভিযোগ গ্রহণ করার কারণ হিসেবে বলছেন, বেশিরভাগ অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়া সংস্থাটির পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করতে পারছে না। এ ছাড়া অভিযোগের একটি বড় অংশ ভিত্তিহীন ও ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে আসায় তা আমলে নিতে পারছে না সংস্থাটি।
দুদকের মামলার সংখ্যা : ২০২৩ সালে বিভিন্ন অভিযোগে দুদক ৪০৪টি মামলা দায়ের করেছে। ২০২২, ২০২১, ২০২০ ও ২০১৯ এই পাঁচ বছরে মামলা দায়েরের হার ছিল যথাক্রমে ৪০৬, ৩৪৭, ৩৪৮ ও ৩৬৩টি। আর ২০২৩ সালে ৩৬৩টি মামলার চার্জশিট অনুমোদন করে কমিশন। ২০২২, ২০২১, ২০২০ ও ২০১৯ এই পাঁচ বছরে চার্জশিটে অনুমোদন করে যথাক্রমে ২২৪, ২৬০, ২২৮ ও ২৬৭টি।
দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনর তথ্য মতে, ২০২৩ সালে সংস্থাটিতে জমা পড়া ১৫ হাজার ৪৩৭টি অভিযোগের মধ্যে অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়েছে ৮৪৫টি। শতাংশ হারে যার পরিমাণ ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০২২ সালে মোট অভিযোগ পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি, অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয় ৯০১টি। যার হার ছিল ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০২১ সালে অভিযোগ পড়ে ১৪ হাজার ৭৮৯টি, ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ হারে অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয় ৫৩৩টি। ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৪৮৯টি অভিযোগ জমা পড়ে। যার মধ্যে অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে ৮২২টি, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। একইভাবে ২০১৯ সালে ২১ হাজার ৩৭১টি অভিযোগ জমা পড়ে। এ বছর অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয় এক হাজার ৭১০টি। যা মোট অভিযোগের ৮ শতাংশ। ২০২২ সালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সরাসরি অভিযোগ জমা পড়েছে ৯ হাজার ২৬২টি, যা ২০২২ এর চেয়ে ২ হাজার ৫৩৪টি কম। গত বছর সরাসরি অভিযোগ পড়েছিল ১১ হাজার ৭৯৬টি। এ বছর সরকারি দপ্তর বা সংস্থা থেকে অভিযোগ এসেছে ৭৭১টি, গত বছর যা ছিল ৯৬৭টি। বেসরকারি দপ্তর বা সংস্থা থেকে অভিযোগ এসেছে ৩০৮টি, যা গত বছরের চেয়ে ৭৯টি কম। পত্রপত্রিকা বা টেলিভিশনের প্রতিবেদন থেকে যাচাই বাছাইয়ে নেওয়া হয়েছে এক হাজার ৮০টি অভিযোগ, গত বছর এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৩৫৪টি। বিভাগীয় কার্যালয় থেকে অভিযোগ এসেছে এক হাজার ৪৩৯টি। এনফোর্সমেন্ট থেকে ৪৬২টি এবং অন্যান্য মাধ্যমে ২ হাজার ১১৫টি অভিযোগ জমা পড়ে। ২০২৩ সালে দুদক বিভিন্ন মামলায় আসামিদেরকে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি ৬৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫৪৬ টাকা জরিমানা করে। ২০২২ সালের চেয়ে জরিমানার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা কম। গত বছর দুদকের মামলা আসামিদেরকে জরিমানা করা হয়েছিল ২ হাজার ৬৩২ কোটি ৪১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৩ টাকা। গত এক বছরে রাষ্ট্রের অনুকূলে আদালতের নির্দেশে ১৭ কোটি ৯৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫ টাকা বাজেয়াপ্ত করে সংস্থাটি।
রাষ্ট্রপতির সাক্ষাতের অনুমতি পায়নি কমিশন : দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা রাষ্ট্রপতির কাছে আনুষ্ঠানিকতভাবে জমা দেওয়ার রেওয়াজ প্রচলিত। রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার পরই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে সংস্থাটি। চলতি বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন জমা ও সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে চাইলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সাক্ষাতের অনুমতি দেননি। তাই রেওয়াজ ভেঙে দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. শাহরিয়ার বঙ্গভবনে বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিয়ে আসেন। দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রপতি কিছুটা নাখোশ থাকতে পারেন, হয়তো সে কারণেই তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাননি। যে কারণে সেই রেওয়াজ রক্ষা না করেই দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদেরকে সাক্ষাতের সুযোগ দেননি তিনি। রাষ্ট্রপতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বার্ষিক প্রতিবেদন জমা না করতে পারায় প্রতিবেদনের বিষয়ে কমিশনের কেউ বক্তব্য দিতেও রাজি হননি।