আজ বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন দিন
জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টালে যে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন। মেসার্স রুকাইয়া এড ফার্ম -01971 211241

ফুটপাত থেকে মাইক্রোসফটের প্রধান ডিজাইনার হওয়া তরুণীর গল্প

  • রিপোর্টার
  • আপডেট সময়: ১১:৪৫:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪
  • ১৫৩ বার পড়া হয়েছে

নিম্নবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম তার। খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে ফুটপাতে। বসবাস করেছেন বস্তিতে। জীবনযাপন করেছেন মানবেতর। অনেক সময় রাস্তায় শুয়েও থেকেছেন। শুধু তাই নয়, অনেকবার যৌন হেনস্তারও শিকার হয়েছেন তিনি। এত কঠিন বাস্তবতার মাঝেও স্বপ্ন বুনতেন আকাশছোঁয়ার। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে এতটাই বদলে ফেলেছিলেন যে, মাইক্রোসফটের মতো জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে চাকরির অফার করে বসে। বলছিলাম ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করা শাহিনা আতারওয়ালার কথা। তার সফলতার গল্পটা ভীষণ অনুপ্রেরণামূলক। উত্তর প্রদেশ থেকে মুম্বাইয়ে এসে বান্দ্রা রেলওয়ে স্টেশনের কাছাকাছি দর্গা গলি বস্তিতে বসবাস শুরু করে শাহিনার পরিবার। তার বাবা ছিলেন হকার। তিনি ফেরি করে কখনো তেল আবার কখনো চুড়ি বিক্রি করতেন।

শাহিনা বলেন, ‘বস্তিতে বসবাস ছিল দুরূহ। সেখানে লিঙ্গবৈষম্য ছিল। প্রায়ই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটত। তবে এসবই তাকে পড়াশোনায় অতি আগ্রহী করে তোলেছে। উন্নত জীবন গড়তে জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে।’ শাহিনা প্রথম কম্পিউটার চোখে দেখেন স্কুলে। এরপর থেকে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি তার কৌতূহল বেড়ে যায়। তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, কম্পিউটারই নারী-পুরুষের মাঝে সমতা আনতে পারে। যিনি এটির সামনে বসবেন, তারই ভাগ্য বদলে যাবে। তিনি অনেক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে পারবেন।’ তবে কম্পিউটার ক্লাস করার সুযোগ পেতেন না শাহিনা। কারণ, তার মেধাক্রম তেমন ছিল না। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতেন না। তবুও তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপদান করেছেন তিনি।

স্থানীয় একটি স্কুলে কম্পিউটার ক্লাস করার জন্য বাবাকে ঋণ নিতে বাধ্য করেন শাহিনা। কিন্তু এরপরও অর্থের অভাবে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় তার কম্পিউটার শেখা। অভাব এতই তীব্র হয় যে, ছোট ঘরে বেড়া দিয়ে থাকা সম্ভব না হওয়ায় চলে যেতে হয় ফুটপাতে। কিন্তু হার না মানা শাহিনা বিকল্প চিন্তা করে বসেন। প্রতিদিন এক বেলা খাবার না খেয়ে এবং স্কুলে বাসের পরিবর্তে হেঁটে গিয়ে জমাতে শুরু করেন টাকা। সেই টাকায় আবারও ভর্তি হন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এবং একটি কম্পিউটার কিনে বাড়িতে শুরু করেন কাজ। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে মোম্বাইয়ে একটি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে বিকম পাস করেন। পাশাপাশি ডিপ্লোমা করেন ভিজুয়াল কমিনিকেশন অ্যান্ড ডিজাইন নিয়ে।

এরপর বিভিন্ন নামিদামি সংস্থা থেকে চাকরির অফার পেতে থাকেন শাহিনা। শেষ পর্যন্ত মাইক্রোসফটে চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বর্তমানে মাক্রোফটে প্রধান ইউএক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন এই মুসলিম তরুণী। বস্তি ছেড়ে পরিবার নিয়ে বিলাসবহুল এক অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছেন শাহিনা। তিনি বলেন, তার বাবা হকার ছিলেন, রাস্তায় শুয়ে থাকতে হতো। তবুও স্বপ্ন থেকে পিছপা হননি। সৌভাগ্য, কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে যুদ্ধ করার মানসিকতাই তাকে জয়ী হতে সহায়তা করেছে। প্রায় ১ দশকের গ্লানি মুছে দিয়েছে।

ট্যাগস:

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

ফুটপাত থেকে মাইক্রোসফটের প্রধান ডিজাইনার হওয়া তরুণীর গল্প

আপডেট সময়: ১১:৪৫:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

নিম্নবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম তার। খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে ফুটপাতে। বসবাস করেছেন বস্তিতে। জীবনযাপন করেছেন মানবেতর। অনেক সময় রাস্তায় শুয়েও থেকেছেন। শুধু তাই নয়, অনেকবার যৌন হেনস্তারও শিকার হয়েছেন তিনি। এত কঠিন বাস্তবতার মাঝেও স্বপ্ন বুনতেন আকাশছোঁয়ার। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে এতটাই বদলে ফেলেছিলেন যে, মাইক্রোসফটের মতো জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে চাকরির অফার করে বসে। বলছিলাম ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করা শাহিনা আতারওয়ালার কথা। তার সফলতার গল্পটা ভীষণ অনুপ্রেরণামূলক। উত্তর প্রদেশ থেকে মুম্বাইয়ে এসে বান্দ্রা রেলওয়ে স্টেশনের কাছাকাছি দর্গা গলি বস্তিতে বসবাস শুরু করে শাহিনার পরিবার। তার বাবা ছিলেন হকার। তিনি ফেরি করে কখনো তেল আবার কখনো চুড়ি বিক্রি করতেন।

শাহিনা বলেন, ‘বস্তিতে বসবাস ছিল দুরূহ। সেখানে লিঙ্গবৈষম্য ছিল। প্রায়ই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটত। তবে এসবই তাকে পড়াশোনায় অতি আগ্রহী করে তোলেছে। উন্নত জীবন গড়তে জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে।’ শাহিনা প্রথম কম্পিউটার চোখে দেখেন স্কুলে। এরপর থেকে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি তার কৌতূহল বেড়ে যায়। তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, কম্পিউটারই নারী-পুরুষের মাঝে সমতা আনতে পারে। যিনি এটির সামনে বসবেন, তারই ভাগ্য বদলে যাবে। তিনি অনেক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে পারবেন।’ তবে কম্পিউটার ক্লাস করার সুযোগ পেতেন না শাহিনা। কারণ, তার মেধাক্রম তেমন ছিল না। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতেন না। তবুও তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপদান করেছেন তিনি।

স্থানীয় একটি স্কুলে কম্পিউটার ক্লাস করার জন্য বাবাকে ঋণ নিতে বাধ্য করেন শাহিনা। কিন্তু এরপরও অর্থের অভাবে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় তার কম্পিউটার শেখা। অভাব এতই তীব্র হয় যে, ছোট ঘরে বেড়া দিয়ে থাকা সম্ভব না হওয়ায় চলে যেতে হয় ফুটপাতে। কিন্তু হার না মানা শাহিনা বিকল্প চিন্তা করে বসেন। প্রতিদিন এক বেলা খাবার না খেয়ে এবং স্কুলে বাসের পরিবর্তে হেঁটে গিয়ে জমাতে শুরু করেন টাকা। সেই টাকায় আবারও ভর্তি হন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এবং একটি কম্পিউটার কিনে বাড়িতে শুরু করেন কাজ। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে মোম্বাইয়ে একটি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে বিকম পাস করেন। পাশাপাশি ডিপ্লোমা করেন ভিজুয়াল কমিনিকেশন অ্যান্ড ডিজাইন নিয়ে।

এরপর বিভিন্ন নামিদামি সংস্থা থেকে চাকরির অফার পেতে থাকেন শাহিনা। শেষ পর্যন্ত মাইক্রোসফটে চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বর্তমানে মাক্রোফটে প্রধান ইউএক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন এই মুসলিম তরুণী। বস্তি ছেড়ে পরিবার নিয়ে বিলাসবহুল এক অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছেন শাহিনা। তিনি বলেন, তার বাবা হকার ছিলেন, রাস্তায় শুয়ে থাকতে হতো। তবুও স্বপ্ন থেকে পিছপা হননি। সৌভাগ্য, কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে যুদ্ধ করার মানসিকতাই তাকে জয়ী হতে সহায়তা করেছে। প্রায় ১ দশকের গ্লানি মুছে দিয়েছে।