আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
বিজ্ঞাপন দিন
জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টালে যে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন। মেসার্স রুকাইয়া এড ফার্ম -01971 211241

সড়কের পাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর মানবেতর জীবনযাপন

  • রিপোর্টার
  • আপডেট সময়: ০৫:০২:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪
  • ৮৮ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে বসতঘর হারিয়ে সড়কের পাশের খোলা মাঠে পলিথিন টানিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেই দিনরাত কাটছে অসহায় পরিবারগুলোর। জোটেনি রাতের খাবার। মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে একবেলা খিচুড়ি জুটলেও আরেকবেলা খোঁজ নেয়নি কেউ। অনেককে কাটাতে হয়েছে শুধু পানি খেয়ে। এভাবেই ফাকা মাঠে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের দু’পাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর। সকলের মুখেই অনিশ্চয়তার ছাপ। কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, সেই চিন্তায় ঘুম নেই তাদের।

সোমবার (১ জুলাই) উচ্ছেদ হওয়ার পর রাস্তার পাশের মাঠেই বৃষ্টিতে ভিজে নির্ঘুম রাত কেটেছে তাদের। মঙ্গলবার দিনের আলোতেও সেই একই চিত্র। সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা-বাঙ্গারের মোড়-বাকাল এলাকা থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন তারা। মঙ্গলবারের উচ্ছেদ অভিযানে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া পরিবারের সংখ্যা আরো বেড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসতভিটা হারিয়ে রাস্তার পাশে খোলা মাঠে পলিথিন টানিয়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অসহায় পরিবারগুলো। প্রচন্ড বৃষ্টিতে সারারাত ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কেটেছে তাদের। সেই সাথে দেখা দিয়েছে খাবারের কষ্ট। এদেরই একজন আফরোজা। সারারাত মেয়ে মরিয়মকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, সারারাত চোখ বুঝতে পারিনি। মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে ছিলাম। মেয়ে একটু ঘুম পড়লেও বৃষ্টি হলেই ভিজে আবার জেগে গেছে ও। আমরা তো পথে বসে গেছি।

আফরোজার মতো জেসমিন, রাবেয়া, পারুল ও খাদিজাও নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। পরণে ভেজা জামা-কাপড়। সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে তাদের বসত ঘর। শেষ সম্বল হারিয়ে তারা ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির পাশের খোলা মাঠের এক কোণে পলিথিন টানিয়ে কাটিয়েছে রাত।

এই মাঠের এক কোণে মুড়ি খাচ্ছিলেন আজগর আলী। মুুড়ি খেতে খেতে তিনি বলেন, সারারাত কিছু খায় নি। তাই দোকান থেকে শুকনা মুড়ি নিয়ে আসলাম। ১৫ বছর ধরে স্ত্রী পুত্র নিয়ে এখানে বসবাস করছি। কিন্তু এবার সড়ক জনপদ বিভাগ আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। পরিবারের ১৩ জন সদস্য এখন কে যে কোথায় থাকবে?

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ উচ্ছেদ হওয়া পরিবার গুলোকে দ্রুত পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, পরিবারগুলো পথে বসেছে। মানবেতন জীবনযাপন করছে। তাদের দুঃখকষ্ট দেখার মতো না। খোলা আকাশে বৃষ্টিতে ভিজে রাত কেটেছে তাদের। তাদের দ্রুত পুনর্বাসন করা দরকার।

প্রসঙ্গত, সোমবার (১ জুলাই) থেকে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সড়কের দুইপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এতে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে সড়কের পাশে বসবাস করা অনেক পরিবার।

ট্যাগস:

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

বাড়তে পারে ঈদ ও পূজার ছুটি

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

সড়কের পাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর মানবেতর জীবনযাপন

আপডেট সময়: ০৫:০২:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে বসতঘর হারিয়ে সড়কের পাশের খোলা মাঠে পলিথিন টানিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেই দিনরাত কাটছে অসহায় পরিবারগুলোর। জোটেনি রাতের খাবার। মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে একবেলা খিচুড়ি জুটলেও আরেকবেলা খোঁজ নেয়নি কেউ। অনেককে কাটাতে হয়েছে শুধু পানি খেয়ে। এভাবেই ফাকা মাঠে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের দু’পাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর। সকলের মুখেই অনিশ্চয়তার ছাপ। কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, সেই চিন্তায় ঘুম নেই তাদের।

সোমবার (১ জুলাই) উচ্ছেদ হওয়ার পর রাস্তার পাশের মাঠেই বৃষ্টিতে ভিজে নির্ঘুম রাত কেটেছে তাদের। মঙ্গলবার দিনের আলোতেও সেই একই চিত্র। সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা-বাঙ্গারের মোড়-বাকাল এলাকা থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন তারা। মঙ্গলবারের উচ্ছেদ অভিযানে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া পরিবারের সংখ্যা আরো বেড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসতভিটা হারিয়ে রাস্তার পাশে খোলা মাঠে পলিথিন টানিয়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অসহায় পরিবারগুলো। প্রচন্ড বৃষ্টিতে সারারাত ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কেটেছে তাদের। সেই সাথে দেখা দিয়েছে খাবারের কষ্ট। এদেরই একজন আফরোজা। সারারাত মেয়ে মরিয়মকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, সারারাত চোখ বুঝতে পারিনি। মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে ছিলাম। মেয়ে একটু ঘুম পড়লেও বৃষ্টি হলেই ভিজে আবার জেগে গেছে ও। আমরা তো পথে বসে গেছি।

আফরোজার মতো জেসমিন, রাবেয়া, পারুল ও খাদিজাও নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। পরণে ভেজা জামা-কাপড়। সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে তাদের বসত ঘর। শেষ সম্বল হারিয়ে তারা ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির পাশের খোলা মাঠের এক কোণে পলিথিন টানিয়ে কাটিয়েছে রাত।

এই মাঠের এক কোণে মুড়ি খাচ্ছিলেন আজগর আলী। মুুড়ি খেতে খেতে তিনি বলেন, সারারাত কিছু খায় নি। তাই দোকান থেকে শুকনা মুড়ি নিয়ে আসলাম। ১৫ বছর ধরে স্ত্রী পুত্র নিয়ে এখানে বসবাস করছি। কিন্তু এবার সড়ক জনপদ বিভাগ আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। পরিবারের ১৩ জন সদস্য এখন কে যে কোথায় থাকবে?

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ উচ্ছেদ হওয়া পরিবার গুলোকে দ্রুত পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, পরিবারগুলো পথে বসেছে। মানবেতন জীবনযাপন করছে। তাদের দুঃখকষ্ট দেখার মতো না। খোলা আকাশে বৃষ্টিতে ভিজে রাত কেটেছে তাদের। তাদের দ্রুত পুনর্বাসন করা দরকার।

প্রসঙ্গত, সোমবার (১ জুলাই) থেকে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সড়কের দুইপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এতে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে সড়কের পাশে বসবাস করা অনেক পরিবার।