আজ সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন দিন
জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টালে যে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন। মেসার্স রুকাইয়া এড ফার্ম -01711 211241

বিশ্বনবী (সা.) যে কারণে কবুতরকে শয়তান বলেছেন

  • রিপোর্টার
  • আপডেট সময়: ০৮:১৭:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

কবুতর জনপ্রিয় গৃহপালিত পাখি। শান্তির পায়রা হিসেবে এর মর্যাদা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু বিশ্বনবী (সা.) এই পাখিকে শয়তান বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও এই হাদিসের ব্যখ্যা অন্য। বর্তমানে মসজিদুল হারামের আঙিনায় প্রবেশ করলেই ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতরের দেখা মেলে। ধূসর পালক, নীল বা সবুজ রঙের দীর্ঘ ঘাড় ও টানা চোখ এদের কিছুটা ভিন্নতা এনে দিয়েছে। আশপাশের খোলা জায়গায় রয়েছে এদের অবাধ বিচরণ। মসজিদুল হারামগামী মুসল্লিদের সঙ্গেও রয়েছে এদের বেশ সখ্যতা। কেউ তাদের নির্বিঘ্ন উড়াউড়িতে বাধ সাধে না; বরং গমের দানা ছিটিয়ে দিয়ে মুসল্লি ও কবুতরের মধ্যে তৈরি হয় ভালোবাসা। এসব কবুতরের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সচরাচর অন্যান্য কবুতরের মধ্যে দেখা যায় না।

কবুতরগুলো কাবাঘরের চারপাশে উড়াউড়ি করলেও তাওয়াফকারী বা মুসল্লিদের কষ্ট হয় এমন কিছু করে না। সারা দিন কাবা চত্বরে আনাগোনা থাকলেও তারা মসজিদের ভেতরে বসবাস করে না এবং রাতেও এখানে থাকে না। এমনকি বিভিন্ন সময় পশুপাখির মধ্যে নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়ালেও তাতে এসব কবুতর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় না। এসব কবুতরের উৎসমূল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। কারো মতে, এগুলো সাওর পাহাড়ের হেরা গুহায় বাসা বাঁধা কবুতরের বংশধর। হিজরতের সময় তারা সাওর পাহাড়ে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) ও আবু বকর (রা.)-এর আশ্রয় নিলে তারা এসে গুহার মুখে বাসা বাঁধে। পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ তাদের বংশধরদের মক্কায় নিরাপদে বসবাসের সুযোগ দেন।

কারো কারো মতে, বিশেষ নিরাপত্তা পাওয়া এসব কবুতর আবাবিল পাখির বংশধর। কাবাঘর ভাঙতে আসা আবরাহা ও তার বাহিনীকে ধ্বংস করতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আবাবিল পাখি পাঠানো হয়েছিল। পবিত্র কোরআনের সুরা ফিল-এ এই ঘটনার বিবরণ রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, তা নুহ (আ.)-এর জাহাজে থাকা কবুতরের বংশধর। হযরত নুহ (আ) এর প্লাবনের সময় জুদী পর্বতে নৌকা থামার পর হজরত নুহ (আ.) এবং তাঁর সাথিরা পৃথিবীতে নামার জন্য প্রস্তুত হলেন। আশপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আসার জন্য নুহ (আ.) তার নৌকা থেকে প্রথমে একটি কাককে পাঠালেন। কাকটা উড়ে গিয়ে মরা খেতে লেগে যায়। কাক আসতে দেরি হচ্ছে দেখে নুহ (আ.) একটি কবুতরকে পাঠালেন অবস্থা দেখে আসার জন্য।

কবুতরটা উড়ে গেল এবং কিছুক্ষণ পর একটি জলপাইয়ের ডাল ঠোঁটে নিয়ে ফিরে এলো। এবং কবুতরের পায়ে কাঁদা লেগে আছে দেখে হজরত নুহ (আ.) এবং নৌকার অন্যান্য আরোহীরা বুঝতে পারলেন পৃথিবী এখন বসবাসের উপযোগী। কবুতরের এই কাজের জন্য হযরত নুহ (আ.) কবুতরের জন্য দোয়া করেছিলেন ফলে কবুতর মানুষের সঙ্গে সহজে পোষ মানে। এবার আসা যাক কবুতরকে শয়তান বলার বিষয়ে। আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে কবুতরের পেছনে দৌড়াচ্ছে অর্থাৎ খেলা করছে। তখন রাসুল (সা.) বললেন, এক শয়তান আরেক শয়তানের পেছনে ছুটছে।

এক শয়তান আরেক শয়তানের অনুসরণ করছে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি কবুতরের পেছনে দৌড়াচ্ছে সে সত্য পথ থেকে দূরে রয়েছে এবং এমন কাজে ব্যস্ত রয়েছে যাতে কোনো কল্যাণ নেই। আর এই কাজ ওই ব্যক্তিকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করছে এবং তিনি এমন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন যা তাকে দীন ও দুনিয়া অন্বেষণ থেকে অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে। কবুতর নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকা এবং শিকারের পেছনে ছোটা মানুষকে মজিয়ে রাখে। এতে আল্লাহর আনুগত্য, ইবাদত-বন্দেগি ছুটে যায়। এ জন্যই রাসুল (সা.) বলেছেন, এক শয়তান আরেক শয়তানের পিছে লেগেছে।

ট্যাগস:

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিশ্বনবী (সা.) যে কারণে কবুতরকে শয়তান বলেছেন

আপডেট সময়: ০৮:১৭:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

কবুতর জনপ্রিয় গৃহপালিত পাখি। শান্তির পায়রা হিসেবে এর মর্যাদা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু বিশ্বনবী (সা.) এই পাখিকে শয়তান বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও এই হাদিসের ব্যখ্যা অন্য। বর্তমানে মসজিদুল হারামের আঙিনায় প্রবেশ করলেই ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতরের দেখা মেলে। ধূসর পালক, নীল বা সবুজ রঙের দীর্ঘ ঘাড় ও টানা চোখ এদের কিছুটা ভিন্নতা এনে দিয়েছে। আশপাশের খোলা জায়গায় রয়েছে এদের অবাধ বিচরণ। মসজিদুল হারামগামী মুসল্লিদের সঙ্গেও রয়েছে এদের বেশ সখ্যতা। কেউ তাদের নির্বিঘ্ন উড়াউড়িতে বাধ সাধে না; বরং গমের দানা ছিটিয়ে দিয়ে মুসল্লি ও কবুতরের মধ্যে তৈরি হয় ভালোবাসা। এসব কবুতরের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সচরাচর অন্যান্য কবুতরের মধ্যে দেখা যায় না।

কবুতরগুলো কাবাঘরের চারপাশে উড়াউড়ি করলেও তাওয়াফকারী বা মুসল্লিদের কষ্ট হয় এমন কিছু করে না। সারা দিন কাবা চত্বরে আনাগোনা থাকলেও তারা মসজিদের ভেতরে বসবাস করে না এবং রাতেও এখানে থাকে না। এমনকি বিভিন্ন সময় পশুপাখির মধ্যে নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়ালেও তাতে এসব কবুতর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় না। এসব কবুতরের উৎসমূল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। কারো মতে, এগুলো সাওর পাহাড়ের হেরা গুহায় বাসা বাঁধা কবুতরের বংশধর। হিজরতের সময় তারা সাওর পাহাড়ে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) ও আবু বকর (রা.)-এর আশ্রয় নিলে তারা এসে গুহার মুখে বাসা বাঁধে। পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ তাদের বংশধরদের মক্কায় নিরাপদে বসবাসের সুযোগ দেন।

কারো কারো মতে, বিশেষ নিরাপত্তা পাওয়া এসব কবুতর আবাবিল পাখির বংশধর। কাবাঘর ভাঙতে আসা আবরাহা ও তার বাহিনীকে ধ্বংস করতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আবাবিল পাখি পাঠানো হয়েছিল। পবিত্র কোরআনের সুরা ফিল-এ এই ঘটনার বিবরণ রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, তা নুহ (আ.)-এর জাহাজে থাকা কবুতরের বংশধর। হযরত নুহ (আ) এর প্লাবনের সময় জুদী পর্বতে নৌকা থামার পর হজরত নুহ (আ.) এবং তাঁর সাথিরা পৃথিবীতে নামার জন্য প্রস্তুত হলেন। আশপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আসার জন্য নুহ (আ.) তার নৌকা থেকে প্রথমে একটি কাককে পাঠালেন। কাকটা উড়ে গিয়ে মরা খেতে লেগে যায়। কাক আসতে দেরি হচ্ছে দেখে নুহ (আ.) একটি কবুতরকে পাঠালেন অবস্থা দেখে আসার জন্য।

কবুতরটা উড়ে গেল এবং কিছুক্ষণ পর একটি জলপাইয়ের ডাল ঠোঁটে নিয়ে ফিরে এলো। এবং কবুতরের পায়ে কাঁদা লেগে আছে দেখে হজরত নুহ (আ.) এবং নৌকার অন্যান্য আরোহীরা বুঝতে পারলেন পৃথিবী এখন বসবাসের উপযোগী। কবুতরের এই কাজের জন্য হযরত নুহ (আ.) কবুতরের জন্য দোয়া করেছিলেন ফলে কবুতর মানুষের সঙ্গে সহজে পোষ মানে। এবার আসা যাক কবুতরকে শয়তান বলার বিষয়ে। আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে কবুতরের পেছনে দৌড়াচ্ছে অর্থাৎ খেলা করছে। তখন রাসুল (সা.) বললেন, এক শয়তান আরেক শয়তানের পেছনে ছুটছে।

এক শয়তান আরেক শয়তানের অনুসরণ করছে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি কবুতরের পেছনে দৌড়াচ্ছে সে সত্য পথ থেকে দূরে রয়েছে এবং এমন কাজে ব্যস্ত রয়েছে যাতে কোনো কল্যাণ নেই। আর এই কাজ ওই ব্যক্তিকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করছে এবং তিনি এমন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন যা তাকে দীন ও দুনিয়া অন্বেষণ থেকে অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে। কবুতর নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকা এবং শিকারের পেছনে ছোটা মানুষকে মজিয়ে রাখে। এতে আল্লাহর আনুগত্য, ইবাদত-বন্দেগি ছুটে যায়। এ জন্যই রাসুল (সা.) বলেছেন, এক শয়তান আরেক শয়তানের পিছে লেগেছে।