মেক্সিকোর মন্টেরে শহরের ম্যান ওয়াহ ফার্নিচার ফ্যাক্টরিতে যেসব বিলাসবহুল ও আরামদায়ক সোফা তৈরি হয়, সেখানে লিখা রয়েছে ‘মেইড ইন মেক্সিকো’। সেখান থেকে তাদের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্ট ও কস্টকোর মতো বড় বিপণিগুলো। কিন্তু এই কোম্পানিটি চীনের মালিকানাধীন এবং মেক্সিকোয় উৎপাদন কারখানাও তৈরি হয়েছে চীনা অর্থে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মেক্সিকোর মধ্যকার এই ত্রিমুখী সম্পর্ক একটি নতুন শব্দে পরিচিত হয়ে উঠেছে; সেটি হলো ‘নিয়ারশোরিং’- অফশোরিংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে এমন নাম। ম্যান ওয়াহ কয়েক ডজন চীনা কোম্পানির মধ্যে একটি, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর মেক্সিকোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থান নিয়েছে। এতে পরিবহন খরচ কমে যাওয়া ছাড়াও চূড়ান্ত যে পণ্য প্রস্তুত হলো, তা পুরোপুরি মেক্সিকান। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে ওয়াশিংটন চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ও কর আরোপ করেছে, সেটি এড়ানো সম্ভব হয়। ম্যান ওয়াহর জেনারেল ম্যানেজার ইয়ু কেন ওয়েই বলেন, অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক্যাল দিক চিন্তা করেই তারা মেক্সিকোতে তাদের কারখানা সরিয়ে এনেছেন। তিনি বলেন, আমাদের মেক্সিকোয় আসার উদ্দেশ্য হলো, ভিয়েতনামে আমরা যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করি, সেই পরিমাণ এখানেও উৎপাদন করা। কোম্পানিটি মাত্র ২০২২ সালে মন্টেরে আসে এবং এরই মধ্যে মেক্সিকোতে ৪৫০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে তারা। জেনারেল ম্যানেজার জানান, তাদের লক্ষ্য ১২০০র ওপর কর্মীকে কাজে লাগানো, যাতে আসন্ন বছরগুলোতে কয়েক ধাপের অপারেশন এখানে চালু করা যায়।
বাণিজ্য বেড়েছে মেক্সিকোর
মেক্সিকোর সাবেক ফরেন ট্রেড ভাইস মিনিস্টার হুয়ান কার্লোস বাকের পিনেদা বলেন, যেসব কাঠামোগত কারণে মেক্সিকোতে বিনিয়োগ আসছে তার পরিবর্তন হবে না। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য সংঘাত খুব সহসা মিটে যাওয়ার কোনো লক্ষণ আমি দেখি না। তিনি বলেন, যদিও এসব চীনা বিনিয়োগ মেক্সিকোতে ঢোকা হয়তো কিছু দেশের জন্য অস্বস্তিকর। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি অনুযায়ী, এই পণ্যগুলো সব দিক দিয়েই পুরোপুরি মেক্সিকান। বস্তুত এই পরিস্থিতি মেক্সিকোকে দুই সুপারপাওয়ারের মধ্যে কৌশলগত ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। মেক্সিকো সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জায়গায় চীনকে তাদের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার বানিয়েছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও একটা প্রতীকী বদল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে মেক্সিকোর কিছু অংশে আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যার অন্যতম কারণ নিয়ারশোরিং বলে মনে করা হচ্ছে।
এভাবে চীনা বিনিয়োগ আসার বিষয়ে অনেকেই মেক্সিকোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ ভূরাজনৈতিকভাবে এতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে যেতে পারে তারা। উদাহরণ দিয়ে ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোর সেন্টার ফর চায়না-মেক্সিকো স্টাডিজের অধ্যাপক এনরিক দুসেল বলেন, শহরের পুরোনো ধনী যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা দেখা যাচ্ছে শহরের নতুন ধনী চীনের সঙ্গে; কিন্তু মেক্সিকোর আগের সরকার বা বর্তমান সরকারের কোনো কৌশল দেখা যাচ্ছে না এই ত্রিমাত্রিক সম্পর্কের ব্যাপারে।