আজ শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
Logo সাতক্ষীরা সিটি হাসপাতালের উদ্বোধন Logo সাতক্ষীরা সিটি কলেজ পরিচালনায় হাস্যস্কর ও পারিবারিক কমিটি গঠনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল Logo মাাফুজাকে ধর্ষণের বিচার হাসিনা করেনি, আমাকে ৭০ বছরের সাজা দিয়েছে Logo দৈনিক আলোর পরশ পত্রিকা প্রকাশ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo সাতক্ষীরা সীমান্তে দুই দালালসহ আটক ৫ Logo স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের দুই নেতাকে কুপিয়ে জখম Logo দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৬দিন বন্ধ থাকবে ভোমরা বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম Logo আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন Logo সাতক্ষীরা সীমান্তের পূজা মন্ডপগুলোতে বিজিবির টহল কার্যক্রম শুরু Logo খুলনা প্রেসক্লাবের নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন কমিটিকে ফটো জার্নালিস্টদের শুভেচ্ছা
বিজ্ঞাপন দিন
জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টালে যে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন। মেসার্স রুকাইয়া এড ফার্ম -01971 211241

শব্দদূষণ রোধের নতুন প্রযুক্তি কোয়েটপ্রো

  • রিপোর্টার
  • আপডেট সময়: ০৭:১৯:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪
  • ১৫৯ বার পড়া হয়েছে

পরিবেশ দূষণের ব্যাপারে আমরা সবাই এখন অবগত। ক্রমাগত বিভিন্নভাবে আমরা এর শিকার হচ্ছি-Ñ এ কথা বলার অপেক্ষায় রাখে না। তবে পরিবেশ দূষণ হিসেবে শুধু বায়ুদূষণ, পানিদূষণ কিংবা মাটিদূষণের কথা বেশি ভাবলেও আমরা শব্দদূষণের কথা কম ভাবছি। শব্দদূষণ প্রতিরোধে আমরা কার্যকর ব্যবস্থাও কম নিচ্ছি; কিন্তু এর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবের কথা অবশ্যই আমাদের গভীরভাবে ভাবা উচিত। নরওয়ে শব্দদূষণের হাত থেকে বাঁচাতে এক চমৎকার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। ইউরোপের সবচেয়ে তেলসমৃদ্ধ দেশ নরওয়ের উত্তর সাগরের বুকে রয়েছে অসংখ্য তেল উত্তোলন ক্ষেত্র। আর এই তেল উত্তোলন ক্ষেত্রগুলোতে বিকট শব্দের মাঝে কাজ করতে গিয়ে অধিকাংশ শ্রমিক তাদের শ্রবণশক্তি হারাচ্ছেন। জরিপে দেখা গেছে, প্রতি বছর কমপক্ষে ৬ শ শ্রমিকের ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। নরওয়ের মূল ভূখণ্ড থেকে তেলক্ষেত্রগুলোতে যাওয়া-আসার জন্য একমাত্র বাহন হচ্ছে হেলিকপ্টার। আর এর ফলে তেল উত্তোলন ক্ষেত্রের অন্যান্য জোরালো শব্দের সঙ্গে হেলিকপ্টারের বিকট শব্দ সেখানকার কর্মীদের নিত্যসঙ্গী। উত্তর সাগরের এই উচ্চ শব্দের মধ্যেই কাজ করছেন স্টেলে আস। তিনি বলেন, প্রতিটি তেলক্ষেত্রেই রয়েছে ঘূর্ণায়মাণ যন্ত্রপাতি, পানির তোড়ে ঘোরতে থাকা মোটরের চাকা, কপাটক এবং উত্তোলক যন্ত্রসহ আরও অনেক ধরনের যন্ত্রপাতির তীব্র শব্দ। এই উচ্চমাত্রার শব্দদূষণের মধ্যে তার কাজ করার বিরাট অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর তাই নিজের শ্রবণক্ষমতার সমূহ ঝুঁকির ব্যাপারে তিনি বেশ সচেতন।

নরওয়ের বৃহত্তম তেল কোম্পানি হচ্ছে ‘স্টাটওয়েল’। তারা বিকট শব্দ থেকে কর্মীদের বাঁচাতে ‘কোয়েটপ্রো’ নামের এক বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এটি কানে ব্যবহার করার মতো একটি ডিজিটাল প্লাগ। এটি ১২০ ডেসিবেল মাত্রার বিকট আওয়াজকে মাত্র ৩০ ডেসিবেলে নামিয়ে এনে শ্রবণ উপযোগী করে কানে পৌঁছায়। শুধু শব্দের মাত্রা সহনীয় করে তোলা নয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এটি দ্বিগুণ কাজ করে। প্রযুক্তির কার্যকরিতা নিয়ে কাজ করছেন মি. মেলভ্যার। তিনি বলেন, এই প্রযুক্তির প্লাগটি বাহিরের শব্দের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম। এ প্লাগ যেমন হেলিকপ্টার উড্ডয়নের সময় সৃষ্ট বিকট আওয়াজকে কানে পৌঁছতে দেয় না, তেমনি এটিকে সাধারণ শ্রবণযন্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। শুধু তাই নয়, ব্যবহারকারী স্পষ্টভাবে শুনতে পাবে তার কাছে পাঠানো রেডিও বার্তা এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত মাইক্রোফোনের মাধ্যমে অন্য প্রান্তে বার্তা ফেরতও পাঠানো যাবে।

বিমান কিংবা একটু গোলমালের মধ্যে ভালো ঘুমের জন্য যেসব ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা হয়, এটিও সেরকমই একটি প্লাগ। শুধু এর সঙ্গে তার দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে একটি ছোট পকেট কম্পিউটার, যা সেকেন্ডের মধ্যেই বাইরের শব্দের মাত্রা বিশ্লেষণ করে তাকে কানের উপযোগী করে আবার মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পাঠানো বার্তা অপর প্রান্তে সরবরাহ করে। তেলক্ষেত্রগুলোতে কর্মরত মানুষদের জন্য এটি এখন জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। মেলভ্যারের মতে, মানুষের শ্রবণশক্তি সুরক্ষায় বিশ্বে এটিই প্রথম যন্ত্র, যা ব্যবহারকারীদের কানের পর্দায় পৌঁছানো শব্দের সঠিক মাত্রা নির্ণয় করতে পারে। শুধু তাই নয়, এটির সাহায্যে নির্ধারিত সময়ে শব্দ শ্রবণের মাত্রা মেপে পরবর্তীতে কারো শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাসের ঘটনাও নির্ণয় করা সম্ভব। এর ফলে একজন মানুষের জন্য কতটুকু মাত্রার শব্দ সহনীয় এবং কতটুকু মাত্রা অসহনীয় সেটিও নিঁখুতভাবে নির্ণয় করা যায়। নরওয়ের মতো আমরাও কি পারি না শব্দদূষণের হাত থেকে এভাবে নিজেকে বাঁচাতে?

লেখক: বিজ্ঞান ও পরিবেশবিষয়ক কলামিস্ট

ট্যাগস:

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সাতক্ষীরা সিটি হাসপাতালের উদ্বোধন

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

শব্দদূষণ রোধের নতুন প্রযুক্তি কোয়েটপ্রো

আপডেট সময়: ০৭:১৯:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

পরিবেশ দূষণের ব্যাপারে আমরা সবাই এখন অবগত। ক্রমাগত বিভিন্নভাবে আমরা এর শিকার হচ্ছি-Ñ এ কথা বলার অপেক্ষায় রাখে না। তবে পরিবেশ দূষণ হিসেবে শুধু বায়ুদূষণ, পানিদূষণ কিংবা মাটিদূষণের কথা বেশি ভাবলেও আমরা শব্দদূষণের কথা কম ভাবছি। শব্দদূষণ প্রতিরোধে আমরা কার্যকর ব্যবস্থাও কম নিচ্ছি; কিন্তু এর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবের কথা অবশ্যই আমাদের গভীরভাবে ভাবা উচিত। নরওয়ে শব্দদূষণের হাত থেকে বাঁচাতে এক চমৎকার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। ইউরোপের সবচেয়ে তেলসমৃদ্ধ দেশ নরওয়ের উত্তর সাগরের বুকে রয়েছে অসংখ্য তেল উত্তোলন ক্ষেত্র। আর এই তেল উত্তোলন ক্ষেত্রগুলোতে বিকট শব্দের মাঝে কাজ করতে গিয়ে অধিকাংশ শ্রমিক তাদের শ্রবণশক্তি হারাচ্ছেন। জরিপে দেখা গেছে, প্রতি বছর কমপক্ষে ৬ শ শ্রমিকের ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। নরওয়ের মূল ভূখণ্ড থেকে তেলক্ষেত্রগুলোতে যাওয়া-আসার জন্য একমাত্র বাহন হচ্ছে হেলিকপ্টার। আর এর ফলে তেল উত্তোলন ক্ষেত্রের অন্যান্য জোরালো শব্দের সঙ্গে হেলিকপ্টারের বিকট শব্দ সেখানকার কর্মীদের নিত্যসঙ্গী। উত্তর সাগরের এই উচ্চ শব্দের মধ্যেই কাজ করছেন স্টেলে আস। তিনি বলেন, প্রতিটি তেলক্ষেত্রেই রয়েছে ঘূর্ণায়মাণ যন্ত্রপাতি, পানির তোড়ে ঘোরতে থাকা মোটরের চাকা, কপাটক এবং উত্তোলক যন্ত্রসহ আরও অনেক ধরনের যন্ত্রপাতির তীব্র শব্দ। এই উচ্চমাত্রার শব্দদূষণের মধ্যে তার কাজ করার বিরাট অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর তাই নিজের শ্রবণক্ষমতার সমূহ ঝুঁকির ব্যাপারে তিনি বেশ সচেতন।

নরওয়ের বৃহত্তম তেল কোম্পানি হচ্ছে ‘স্টাটওয়েল’। তারা বিকট শব্দ থেকে কর্মীদের বাঁচাতে ‘কোয়েটপ্রো’ নামের এক বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এটি কানে ব্যবহার করার মতো একটি ডিজিটাল প্লাগ। এটি ১২০ ডেসিবেল মাত্রার বিকট আওয়াজকে মাত্র ৩০ ডেসিবেলে নামিয়ে এনে শ্রবণ উপযোগী করে কানে পৌঁছায়। শুধু শব্দের মাত্রা সহনীয় করে তোলা নয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এটি দ্বিগুণ কাজ করে। প্রযুক্তির কার্যকরিতা নিয়ে কাজ করছেন মি. মেলভ্যার। তিনি বলেন, এই প্রযুক্তির প্লাগটি বাহিরের শব্দের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম। এ প্লাগ যেমন হেলিকপ্টার উড্ডয়নের সময় সৃষ্ট বিকট আওয়াজকে কানে পৌঁছতে দেয় না, তেমনি এটিকে সাধারণ শ্রবণযন্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। শুধু তাই নয়, ব্যবহারকারী স্পষ্টভাবে শুনতে পাবে তার কাছে পাঠানো রেডিও বার্তা এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত মাইক্রোফোনের মাধ্যমে অন্য প্রান্তে বার্তা ফেরতও পাঠানো যাবে।

বিমান কিংবা একটু গোলমালের মধ্যে ভালো ঘুমের জন্য যেসব ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা হয়, এটিও সেরকমই একটি প্লাগ। শুধু এর সঙ্গে তার দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে একটি ছোট পকেট কম্পিউটার, যা সেকেন্ডের মধ্যেই বাইরের শব্দের মাত্রা বিশ্লেষণ করে তাকে কানের উপযোগী করে আবার মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পাঠানো বার্তা অপর প্রান্তে সরবরাহ করে। তেলক্ষেত্রগুলোতে কর্মরত মানুষদের জন্য এটি এখন জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। মেলভ্যারের মতে, মানুষের শ্রবণশক্তি সুরক্ষায় বিশ্বে এটিই প্রথম যন্ত্র, যা ব্যবহারকারীদের কানের পর্দায় পৌঁছানো শব্দের সঠিক মাত্রা নির্ণয় করতে পারে। শুধু তাই নয়, এটির সাহায্যে নির্ধারিত সময়ে শব্দ শ্রবণের মাত্রা মেপে পরবর্তীতে কারো শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাসের ঘটনাও নির্ণয় করা সম্ভব। এর ফলে একজন মানুষের জন্য কতটুকু মাত্রার শব্দ সহনীয় এবং কতটুকু মাত্রা অসহনীয় সেটিও নিঁখুতভাবে নির্ণয় করা যায়। নরওয়ের মতো আমরাও কি পারি না শব্দদূষণের হাত থেকে এভাবে নিজেকে বাঁচাতে?

লেখক: বিজ্ঞান ও পরিবেশবিষয়ক কলামিস্ট