সংগীতশিল্পী খালিদ সাইফুল্লাহর মৃত্যুর পর অনেকটাই নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (বামবা)। দেশের হয়ে ব্যান্ড শিল্পীদের অবদান নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে সংগঠনটি। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ কালজয়ী গানগুলো নিয়ে আলাদা করে সম্মানিত করার জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের আবেদনের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। কালবেলাকে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সভাপতি হামিন আহমেদ ও সহসভাপতি শেখ মনিরুল আলম টিপু। খালিদের আত্মার শান্তি কামনা করে শুরুতেই বামবার সভাপতি হামিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি দেশের হয়ে বিশ্বের বুকে স্বাধীনতার আগে থেকে প্রতিনিধিত্ব করছে। সেই থেকে এখন অবধি খোলা মাঠের নিচে ব্যান্ডের কনসার্ট করলে কানায় কানায় ভরে যায়। দর্শকদের দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। যা শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও নিয়মিত দেখা যায়। কিন্তু এমন একটি ইন্ডাস্ট্রির গানের কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। নেই কোনো জাতীয় পুরস্কার। বেসরকারিভাবেও এই গানের সঙ্গে যুগে যুগে যুক্ত থাকার পরও কোনো শিল্পী জীবিত অবস্থায় তার অবদানের স্বীকৃতি পাচ্ছে না। বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের এবং হৃদয় বিদারক। এমন হলে নতুন প্রজন্ম যারা নতুন করে ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছে, তারা তো মুখ ফিরিয়ে নেবে। নতুনদের আগমনে আমরা বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (বামবা) রাষ্ট্রীয় স্বকৃতিসহ সবার কালজয়ী গানগুলো আলাদাভাবে যেন সম্মানিত করা হয়, সে বিষয়ে খুব দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নেব।’
এ সময় হামিন বামবার ওয়েব সাইটসহ তিনটি বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, ‘আমরা প্রথমেই বামবার একটি ওয়েব সাইট চালু করব। যেখানে বাংলাদেশের ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাস, থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের সবকিছু বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকবে। দ্বিতীয় : আমাদের ব্যান্ডের কালজয়ী গানগুলো নিয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব। এগুলো তো বললেই হয়ে যাবে না। তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে যা যা সহযোগিতা করা দরকার মন্ত্রণালয়কে সব কিছু দিয়ে সহযোগিতা করব। এর আগে আমরা নিজেদের মধ্যে একটি প্রাথমিক মিটিং করব। আমরা চাই প্রতিটি ব্যান্ড তাদের কালজয়ী গানের জন্য সম্মানিত হোক। তৃতীয় : যদি এমনটা নাও হয়—তাহলে বামবার আওতায় যেসব ব্যান্ড রয়েছে তাদের জন্য আলাদাভাবে কিছু করার চেষ্টা করব। এভাবে খালি হাতে আর যেন কাউকে বিদায় নিতে না হয়।’ গানের স্বীকৃতি নিয়ে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের দলনেতা ও বামবার সহসভাপতি শেখ মনিরুল আলম টিপু বলেন, ‘আমাদের ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জন্য রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি নেই। আমাদের শিল্পীরা যারাই চলে গিয়েছেন তারই এই স্বীকৃতি না পেয়েই চলে গিয়েছেন। সব শেষ খালিদ চলে গেল। তবে ব্যান্ড সংগীতের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য আমরা বামবার থেকে কার্যকারী পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। সে বিষয়ে আমরা নিজেরা আগে বসব। এরপর তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে অফিসিয়ালি জানানো হবে।’
এ সময় ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয়তা ও দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে টিপু আরও বলেন, ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয়তা দেশের তরুণ, মধ্যবয়সী থেকে শুরু করে সবার কাছেই সমানে সমান। এখন এটি আরও বেড়েছে। যার প্রমাণ দেশজুড়ে ব্যান্ডের কনসার্ট। এখন প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কনসার্টের আয়োজন হচ্ছে। দর্শকদের কাছে ব্যান্ডের গানের চাহিদা বেড়েছে। সবশেষ চট্টগ্রামে জয় বাংলা কনসার্ট ইতিহাস গড়েছে। বলতে গেলে ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয়তা কোনো কিছুর থেকেই কোনো অংশে কম নয়। তাই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পাশাপাশি ব্যান্ড সংগীতে অবদান রাখা শিল্পীদের অর্জন নিয়েও আমরা কাজ করাচ্ছি।’ এ সময় ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে বিশ্বের দরবারে আরও বেশি পরিচিত করার বিষয়েও কথা বলেন ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এ দুই কিংবদন্তি।