সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমটার হওয়ায় সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠে এ বন্দরটি। তবে পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দর হওয়া সত্ত্বেও ভোমরা বন্দরে সকল পণ্যের আমদানির সুযোগ না থাকায় এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ভোমরা স্থলবন্দর। ২০১৩ সালে ওয়্যার হাউজ নির্মাণের পর পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের মর্যাদা পায় বন্দরটি তবে অবকাঠামোগত সংকটের কারণে এ বন্দর দিয়ে সব পণ্য আমদানি করতে পারে না ব্যবসায়ীরা। বন্দর কর্তৃপক্ষের একচোখা নীতির কারণে ধীর গতিতে চলছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম। ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য ঢোকার অনুমতি রয়েছে, ভোমরা কাস্টমস হাউজ চালু না হওয়া ও আমদানিযোগ্য সকল পণ্যের অনুমতি প্রদান সমস্যার কারণে তার সবগুলো ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এছাড়া ভোমরা বন্ধরের উপর নির্ভরশীল এ এলাকার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। কাস্টমস হাউজ চালু হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে এবং হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এ বন্দর থেকে গত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্র ছিল ৩৯ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৩৯,০১,১১,১২৮ টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২০,৯৫,৯৮,৩৪৮ টাকা। কাস্টমস হাউজসহ অবকাঠমোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরের সকল পণ্য আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হলে এখানে রাজাস্ব আদায়ের পরিমান দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট শাহানুর ইসলাম শাহিন জানান, কাস্টমস্ হাউজ প্রতিষ্ঠা হলে আমরা সকল ধরনের পণ্য আমদানির সুবিধা পাব। এছাড়াও ভোমরা স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের শেড না থাকা ও কিপিং লাইসেন্স নেই। কিন্তু কাস্টমস্ হাউজ বাস্তবায়ন হলে এগুলো চলে আসবে। আমরা একজন কমিশনার পাব। আমাদের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমের জন্য আর খুলনায় যেতে হবে না। বর্তমানে এই বন্দরে সব ধরণের পণ্য আমদানির সুযোগ না থাকায় অনেক ব্যবসায়ি অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান বলেন, কাস্টমস্ হাউজটি আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। ভৌগলিক দিক থেকে কোলকাতা থেকে আমাদের বন্দরটি সব থেকে কাছে হওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ভোমরা বন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পদ্মাসেতু হওয়ার পর দেশের যে কোন বন্দর থেকে দ্রুততম সময়ে রাজধানীতে পণ্য পরিবহন শুধুমাত্র ভোমরা স্থল বন্দর দিয়েই সম্ভব। যে কোন পণ্য আমদানি-রপ্তানির সামান্য জটিলতাতেই আমাদেরকে খুলনায় অবস্থিত কাস্টমসের কমিশনার কার্যালয়ে যেতে হয়। সেখান থেকে ঢাকায় যোগাযোগ করার পরই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এই সময়ের মধ্যে পঁচনশীল পণ্য্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসব জটিলতা থাকার কারণেই মূলত এ বন্দরে রাজস্ব আদায় কমে যাচ্ছে। তবে কাস্টমস্ হাউজ বাস্তবায়ন হলে এ সকল জটিলতার অবসান হবে। প্রাণ ফিরে পাবে ভোমরা স্থল বন্দর। তাই এই বন্দরটি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরে রুপান্তরিত হোক এমনটাই দাবি বন্দরের উপর নির্ভরশীল মানুষের।
সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠু বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে ভোমরা বন্দর ব্যবহার করে কলকাতা ও ঢাকার দূরত্ব কমেছে দ্বিগুণ। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষে কাস্টমস হাউজ চালু হলেই পূর্ণাঙ্গ বন্দরে রূপ নিবে ভোমরা বন্দর। তখন সুযোগ সুবিধাও বাড়বে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ভোমরা বন্ধর পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দর হিসেবে চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে এমনটাই নয় সরকারও পাবে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। সাথে বাড়বে এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান।
ভোমরা স্থলবন্দরের সহকারি উপ পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমিন জানান, ভোমরা বনদরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসবের মধ্যে কিছুটা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কিছুটা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ বন্দরটিতে দ্রুত কাস্টম হাউজ চালু করা হবে।