আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
বিজ্ঞাপন দিন
জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টালে যে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন। মেসার্স রুকাইয়া এড ফার্ম -01971 211241

সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধ এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট, বাড়ি ছাড়ছে অনেকে

  • রিপোর্টার
  • আপডেট সময়: ১১:৩২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত না হতে পেরে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। জলাবদ্ধ এলাকায় দেখা দিয়েছে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। ইতিমধ্যে অনেকেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরের বদ্দিপুরকলোনী, কামলানগর, কাঠিয়া মাঠপাড়া, সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা, তালততলা, খেজুরডাঙ্গা, বিনেরপোতা, গোপিনাথপুর, ধুলিহর ইউনিয়নের দামারপোতা, মাছখোলা, বড়দল, বাগডাঙ্গা, জিয়ালা, গোবিন্দপুর, নাথপাড়া, তালতলা, কাজিরবাশা, বালুইগাছা, ধুলিহর সানাপাড়াসহ জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্রায় প্লাবিত হয়ে রয়েছে। পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এসব এলাকার মানুষ। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ বাধ্য হয়ে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে ভিটে ছেড়েছে। অনেক স্থানে হাঁস, মুরগি ও ছাগল মরে দুগন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। মল-মূত্র পানিতে ভেসে একাকার হয়ে গেছে। প্লাবিত এসব এলাকাসহ ধুলিহর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার গভীর নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে খাবার পানির সংকটে ভুগছে এলাকাবাসী।

গোপিনাথপুর গ্রামের দিপংকর মিস্ত্রী জানান, গত প্রায় একমাস ধরে পুরো গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। অনেকের ঘরের মধ্যে পানি উঠেছে। পানি নামার কোন লক্ষণ নেই। এই অবস্থা লোকজন ঘর থেকে বের হয়ে কোমর পানি ভেঙে মেইন রাস্তায় উঠতে হচ্ছে। স্কুলে যেতে না পারায় গ্রামের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে আছে। গ্রামের অধিকাংশ বাথরুম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। টিউব ওয়েল পানিতে ডুবে থাকায় খাবার ও রান্নার পানি অনেক দূর থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে নিদারুন কষ্টে আছে গোপিনাথপুর গ্রামসহ আশেপাশের মানুষ।

ধুলিহরের গোবিন্দপুর গ্রামের জরিনা বেগম জানান, একদিন ভাত না খেয়ে বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু পানি না খেয়ে থাকা যায় না। এখন কোথাও খাওয়ার পানি নেই। ভেলায় করে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে।

একই এলাকার আব্দুল মান্নান নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের এলাকায় খাবার পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেই সাথে রান্না খাওয়ার পানিও নেই। ধুলিহরের বালুইগাছা গ্রামের সাংবাদিক সাহাদাত হোসেন বাবু বলেন, গত ৫-৬ বছর ধরে আমরা জলাবদ্ধতায় ভুগছি। তবে এবারের জলাবদ্ধতা ভয়াবহ বন্যায় রূপ নিয়েছে। অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে খাবার পানির সংকটে ভুগছে এলাকাবাসী।

বড়দল গ্রামের ইউপি সদস্য এনামুল হক খোকন বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার দাফন করার মতো উচু জায়গা নেই। সব পানিতে প্লাবিত। গত কয়েক বছর ধরে এলাকা প্লাবিত হলেও এবার সম্পূর্ন ব্যতিক্রম।

দামারপোতা গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান, আমার ঘরের ভিতরে পানি, রান্না ঘরে পানি, পায়খানা ঘরেও পানি। অপরিকল্পিত মাছের ঘের আর পাউবোর অপরিকল্পিত ফ্লুইস গেট এই সর্বনাশ ডেকে এনেছে। বেতনা নদী খননের কাজ শুরু হলেও তিন বছরে তা শেষ হয়নি । এ কারণে বিগত কয়েক বছরের মতো চলতি বছরেও বেতনা নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে বেতনা নদীর তীরবর্তী ২৫-৩০ গ্রামের ফসলি জমি, মৎস্য ঘের ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী জিএম আমিনুল হক বলেন, জলবদ্ধতা নিরসনে সরকার নদী খননের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়, কিন্তু অপরিকল্পিত খননের কারণে তা যায় জলে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, স্কুল-কলেজ সব পানিতে ডুবে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ধুলিহর গ্রামের গবাদিপশু চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গোয়াল ঘরে পানি ওঠায় গরু ছাগল নিয়ে চরম বিপাকে আছি। সেই সাথে গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দপ্তর জানায়, জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়েছে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মধ্যবর্তী বল্লী, ঝাউডাঙ্গা, লাবসা, ব্রহ্মরাজপুর, ধুলিহর ও ফিংড়ী ইউনিয়নের মানুষ। এছাড়াও সাতক্ষীরা পৌরসভার পূর্বাংশের মানুষ জলাবদ্ধতায় নাকানি-চুবানি খাচ্ছে। তালার নগরঘাটা, ধানদিয়া, খলিলনগর, মাগুরা ইউনিয়নেও একই অবস্থা। জলাবদ্ধতা এ অঞ্চলের মানুষের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, জলাবদ্ধতায় সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন অংশসহ আশপাশের ইউনিয়নে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের ও অপরিকল্পিত নদী খননই এর জন্য দায়ী। রোদে পানি শুকানো ছাড়া জলাবদ্ধ মানুষের মুক্তি নেই।

ট্যাগস:

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

বাড়তে পারে ঈদ ও পূজার ছুটি

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধ এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট, বাড়ি ছাড়ছে অনেকে

আপডেট সময়: ১১:৩২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

সাতক্ষীরায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত না হতে পেরে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। জলাবদ্ধ এলাকায় দেখা দিয়েছে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। ইতিমধ্যে অনেকেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরের বদ্দিপুরকলোনী, কামলানগর, কাঠিয়া মাঠপাড়া, সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা, তালততলা, খেজুরডাঙ্গা, বিনেরপোতা, গোপিনাথপুর, ধুলিহর ইউনিয়নের দামারপোতা, মাছখোলা, বড়দল, বাগডাঙ্গা, জিয়ালা, গোবিন্দপুর, নাথপাড়া, তালতলা, কাজিরবাশা, বালুইগাছা, ধুলিহর সানাপাড়াসহ জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্রায় প্লাবিত হয়ে রয়েছে। পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এসব এলাকার মানুষ। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ বাধ্য হয়ে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে ভিটে ছেড়েছে। অনেক স্থানে হাঁস, মুরগি ও ছাগল মরে দুগন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। মল-মূত্র পানিতে ভেসে একাকার হয়ে গেছে। প্লাবিত এসব এলাকাসহ ধুলিহর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার গভীর নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে খাবার পানির সংকটে ভুগছে এলাকাবাসী।

গোপিনাথপুর গ্রামের দিপংকর মিস্ত্রী জানান, গত প্রায় একমাস ধরে পুরো গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। অনেকের ঘরের মধ্যে পানি উঠেছে। পানি নামার কোন লক্ষণ নেই। এই অবস্থা লোকজন ঘর থেকে বের হয়ে কোমর পানি ভেঙে মেইন রাস্তায় উঠতে হচ্ছে। স্কুলে যেতে না পারায় গ্রামের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে আছে। গ্রামের অধিকাংশ বাথরুম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। টিউব ওয়েল পানিতে ডুবে থাকায় খাবার ও রান্নার পানি অনেক দূর থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে নিদারুন কষ্টে আছে গোপিনাথপুর গ্রামসহ আশেপাশের মানুষ।

ধুলিহরের গোবিন্দপুর গ্রামের জরিনা বেগম জানান, একদিন ভাত না খেয়ে বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু পানি না খেয়ে থাকা যায় না। এখন কোথাও খাওয়ার পানি নেই। ভেলায় করে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে।

একই এলাকার আব্দুল মান্নান নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের এলাকায় খাবার পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেই সাথে রান্না খাওয়ার পানিও নেই। ধুলিহরের বালুইগাছা গ্রামের সাংবাদিক সাহাদাত হোসেন বাবু বলেন, গত ৫-৬ বছর ধরে আমরা জলাবদ্ধতায় ভুগছি। তবে এবারের জলাবদ্ধতা ভয়াবহ বন্যায় রূপ নিয়েছে। অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে খাবার পানির সংকটে ভুগছে এলাকাবাসী।

বড়দল গ্রামের ইউপি সদস্য এনামুল হক খোকন বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার দাফন করার মতো উচু জায়গা নেই। সব পানিতে প্লাবিত। গত কয়েক বছর ধরে এলাকা প্লাবিত হলেও এবার সম্পূর্ন ব্যতিক্রম।

দামারপোতা গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান, আমার ঘরের ভিতরে পানি, রান্না ঘরে পানি, পায়খানা ঘরেও পানি। অপরিকল্পিত মাছের ঘের আর পাউবোর অপরিকল্পিত ফ্লুইস গেট এই সর্বনাশ ডেকে এনেছে। বেতনা নদী খননের কাজ শুরু হলেও তিন বছরে তা শেষ হয়নি । এ কারণে বিগত কয়েক বছরের মতো চলতি বছরেও বেতনা নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে বেতনা নদীর তীরবর্তী ২৫-৩০ গ্রামের ফসলি জমি, মৎস্য ঘের ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী জিএম আমিনুল হক বলেন, জলবদ্ধতা নিরসনে সরকার নদী খননের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়, কিন্তু অপরিকল্পিত খননের কারণে তা যায় জলে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, স্কুল-কলেজ সব পানিতে ডুবে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ধুলিহর গ্রামের গবাদিপশু চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গোয়াল ঘরে পানি ওঠায় গরু ছাগল নিয়ে চরম বিপাকে আছি। সেই সাথে গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দপ্তর জানায়, জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়েছে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মধ্যবর্তী বল্লী, ঝাউডাঙ্গা, লাবসা, ব্রহ্মরাজপুর, ধুলিহর ও ফিংড়ী ইউনিয়নের মানুষ। এছাড়াও সাতক্ষীরা পৌরসভার পূর্বাংশের মানুষ জলাবদ্ধতায় নাকানি-চুবানি খাচ্ছে। তালার নগরঘাটা, ধানদিয়া, খলিলনগর, মাগুরা ইউনিয়নেও একই অবস্থা। জলাবদ্ধতা এ অঞ্চলের মানুষের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, জলাবদ্ধতায় সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন অংশসহ আশপাশের ইউনিয়নে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের ও অপরিকল্পিত নদী খননই এর জন্য দায়ী। রোদে পানি শুকানো ছাড়া জলাবদ্ধ মানুষের মুক্তি নেই।