আজ বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন দিন
জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টালে যে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন। মেসার্স রুকাইয়া এড ফার্ম -01971 211241

শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগে যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান

  • রিপোর্টার
  • আপডেট সময়: ০২:২১:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪
  • ৭৩ বার পড়া হয়েছে

গত ২ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। যখন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন মাসব্যাপী বিক্ষোভের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছিল। দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ২ আগস্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য দিতে এক বৈঠক ডাকেন সেনাপ্রধান। অফিসারদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে সেনাপ্রধান বলেন, ‘যদি অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটে তবে আমাদের দেশ (বাংলাদেশ) কেনিয়া বা অন্যান্য আফ্রিকান দেশের মতো হতে পারে।’

ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে জেনারেল বলেন, ১৯৭০ সালের পর আমাদের দেশে এমন গণবিক্ষোভের অভিজ্ঞতা আর হয়নি। সুতরাং, এটি একটি অনন্য কেস। আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। কিন্তু ততক্ষণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেতর অনেক কিছু ঘটে গেছে।

বৈঠকটি তরুণ অফিসারদের ক্রোধের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এর মধ্য দিয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার অপসারণের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন। তিনদিন পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়েন, যেটা তাকে ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলায় নিয়ে যায়। সেখানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি সি১৩০ পরিবহন উড়োজাহাজ অপেক্ষমাণ ছিল, সেটা শেখ হাসিনাকে দিল্লির উপকণ্ঠের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যায়।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের অবস্থান ছিল অস্বস্তিকর, কারণ তিনি শেখ হাসিনার নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন এবং শেখ হাসিনার আত্মিয় ছিলেন। বিষয়টি সম্ভবত তাকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও সতর্ক করে তুলেছিল।

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মোকাবেলা এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশৃঙ্খলার মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন যৌক্তিক হিসেবে তুলে ধরতে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘ভাল পারফর্ম করেছে’ এবং ১৭১৯ রাউন্ড গুলি ও ১৪,০০০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ৩১টি ‘উত্তপ্ত পরিস্থিতি’ সামাল দিয়েছে।

আলী হায়দার ভূঁইয়া নামে এক তরুণ মেজর সেনা মোতায়েনের সময়ে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার যুক্তির সমর্থনে মেজর ভূঁইয়া পবিত্র কোরআনের দুটি আয়াত উদ্ধৃত করে ‘জুলুমের বিরুদ্ধে অতি শিগগিরই সাহায্য’ কামনা করেন এবং জুলুমে জড়িত না হওয়ার আহ্বান জানান। জুনিয়র অফিসারের এমন কথার প্রেক্ষিতে জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান ‘আমিন’ বলে প্রতিক্রিয়া জানান।

একজন নারী অফিসার মেজর হাজেরা জাহান সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি ‘সন্তান হারানোর বেদনা এবং ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা’ উল্লেখ করেছিলেন। জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান তার কথার সাথেও সম্মত হন।

আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাব ও বিজিবির কিছু কর্মকর্তার ‘অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডের’ কথা উল্লেখ করেন। জবাবে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বিশৃঙ্খল সময় কেটে যাওয়ার পর এর সুরাহা করা হবে। ৫ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব সেনাবাহিনীর প্রতি জনসমর্থন কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে সৈন্য প্রত্যাহারের পরামর্শ দেন। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের আরেক কর্মকর্তা আহত ছাত্রদের সহায়তার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে কাজ করার পরামর্শ দেন। শেষ বক্তব্যে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নিজেও যে সামাজিক চাপ ও হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছেন, তা তুলে ধরেন। নিজের হতাশা প্রকাশে তুলে ধরেন আইয়ুব বাচ্চুর একটি গানের কথা।

ট্যাগস:

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগে যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান

আপডেট সময়: ০২:২১:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪

গত ২ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। যখন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন মাসব্যাপী বিক্ষোভের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছিল। দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ২ আগস্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য দিতে এক বৈঠক ডাকেন সেনাপ্রধান। অফিসারদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে সেনাপ্রধান বলেন, ‘যদি অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটে তবে আমাদের দেশ (বাংলাদেশ) কেনিয়া বা অন্যান্য আফ্রিকান দেশের মতো হতে পারে।’

ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে জেনারেল বলেন, ১৯৭০ সালের পর আমাদের দেশে এমন গণবিক্ষোভের অভিজ্ঞতা আর হয়নি। সুতরাং, এটি একটি অনন্য কেস। আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। কিন্তু ততক্ষণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেতর অনেক কিছু ঘটে গেছে।

বৈঠকটি তরুণ অফিসারদের ক্রোধের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এর মধ্য দিয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার অপসারণের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন। তিনদিন পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়েন, যেটা তাকে ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলায় নিয়ে যায়। সেখানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি সি১৩০ পরিবহন উড়োজাহাজ অপেক্ষমাণ ছিল, সেটা শেখ হাসিনাকে দিল্লির উপকণ্ঠের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যায়।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের অবস্থান ছিল অস্বস্তিকর, কারণ তিনি শেখ হাসিনার নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন এবং শেখ হাসিনার আত্মিয় ছিলেন। বিষয়টি সম্ভবত তাকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও সতর্ক করে তুলেছিল।

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মোকাবেলা এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশৃঙ্খলার মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন যৌক্তিক হিসেবে তুলে ধরতে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘ভাল পারফর্ম করেছে’ এবং ১৭১৯ রাউন্ড গুলি ও ১৪,০০০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ৩১টি ‘উত্তপ্ত পরিস্থিতি’ সামাল দিয়েছে।

আলী হায়দার ভূঁইয়া নামে এক তরুণ মেজর সেনা মোতায়েনের সময়ে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার যুক্তির সমর্থনে মেজর ভূঁইয়া পবিত্র কোরআনের দুটি আয়াত উদ্ধৃত করে ‘জুলুমের বিরুদ্ধে অতি শিগগিরই সাহায্য’ কামনা করেন এবং জুলুমে জড়িত না হওয়ার আহ্বান জানান। জুনিয়র অফিসারের এমন কথার প্রেক্ষিতে জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান ‘আমিন’ বলে প্রতিক্রিয়া জানান।

একজন নারী অফিসার মেজর হাজেরা জাহান সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি ‘সন্তান হারানোর বেদনা এবং ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা’ উল্লেখ করেছিলেন। জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান তার কথার সাথেও সম্মত হন।

আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাব ও বিজিবির কিছু কর্মকর্তার ‘অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডের’ কথা উল্লেখ করেন। জবাবে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বিশৃঙ্খল সময় কেটে যাওয়ার পর এর সুরাহা করা হবে। ৫ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব সেনাবাহিনীর প্রতি জনসমর্থন কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে সৈন্য প্রত্যাহারের পরামর্শ দেন। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের আরেক কর্মকর্তা আহত ছাত্রদের সহায়তার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে কাজ করার পরামর্শ দেন। শেষ বক্তব্যে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নিজেও যে সামাজিক চাপ ও হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছেন, তা তুলে ধরেন। নিজের হতাশা প্রকাশে তুলে ধরেন আইয়ুব বাচ্চুর একটি গানের কথা।