জার্মান ভদ্রলোক প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন মিডফিল্ডার হিসেবে। কোয়ার্টার আর সেমিফাইনালে ১টি করে গোলও করেন। পুরো টুর্নামেন্টে ৪ গোল করে ব্রোঞ্জ বল জেতেন। তবে এরপরেও ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায়। ফাইনালে হেরে গেলেও সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা জিতে নেন তিনি। ১৯৭০ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের। এই বিশ্বকাপে বেকেনবাওয়ার খেলেন ডিফেন্ডার হিসেবে। ৪৯ মিনিটেই ২ গোলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ৬৮ মিনিটে গোল করে বেকেনবাওয়ারই ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন জার্মানিকে। শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে জেতেন জার্মানি; কিন্তু সেমিতে আবারও ইতালির কাছে হেরে যায়। পরপর দুই বিশ্বকাপে ব্যর্থতা তাকে পোড়ানোরই কথা। তবে তিনি হাল ছাড়লেন না। ৭৪ বিশ্বকাপে ডিফেন্ডার হিসেবে খেলেন এবং জার্মানি বিশ্বকাপ জেতে। সেই টুর্নামেন্টে সিলভার বল জেতেন বেকেনবাওয়ার। ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার’– তাকে শতবারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি, তিনবারের প্রচেষ্টাতেই সফল হয়েছিলেন।
এই পর্যন্ত বিশ্বকাপের ইতিহাসে মাত্র দুজন খেলোয়াড় তিনবার করে বিশ্বকাপের অলস্টার দলে সুযোগ পেয়েছেন। ১৯৬৬, ১৯৭০ আর ১৯৭৪ বিশ্বকাপের অল স্টার দলে সুযোগ পাওয়ায় তিনি সেই দুজন খেলোয়াড়ের একজন। এত গেল তার খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের কথা। কোচ হিসেবেও শুরুতে সর্বোচ্চ সফলতার খুব কাছে গিয়েও মিস করেছেন। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার বীরত্বের কাছে হার মেনে তার দল রানার্স আপ হয়েছিল। ৪ বছর পর আবার প্রতিপক্ষ সেই একই ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। এবার জিতে নিলেন সেই কাঙ্ক্ষিত শিরোপা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে মাত্র দুজন মানুষ ‘খেলোয়াড় এবং কোচ’ দুই হিসেবেই বিশ্বকাপ জিতেছেন। ইনি সেই দু’জন মানুষের একজন। ক্লাব ক্যারিয়ারের কথা বাদ দিই কীভাবে? বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে জার্মান ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বুন্দেসলিগার শিরোপা জিতেছেন চার বার। ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমানে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জিতেছেন পরপর তিনবার (১৯৭৩-৭৬)। খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি অর জিতেছেন ২ বার ( ১৯৭২,১৯৭৬)। এত কিছু জানার পর আপনার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসার কথা মানুষটা কে?
মানুষটা হচ্ছেন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, জার্মানির ইতিহাসের অবিসংবাদিত সেরা ফুটবলার। ১৯৪৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া বেকেনবাওয়ারকে নেতৃত্বের গুণাবলির জন্য তাকে কাইজার বা সম্রাট নামেও ডাকা হতো। তাকে আধুনিক সুইপারের উদ্ভাবক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যেকোনো একাদশ করতে চাইলে পেলে কিংবা ম্যারাডোনার বিকল্প হয়তো পাবেন, হয়তো কোয়ালিটিতে তাদের সমতুল্য হবে না কিন্তু একেবারে ফেলেও দিতে পারবেন না। কিন্তু একাদশে বেকেনবাওয়ারের বিকল্প খুঁজে পাবেন না সেটা বলে দেওয়া যায়। ২০১৩ সালে ওয়ার্ল্ড সকারের নির্বাচিত সর্বকালের সেরা একাদশে পেলে ম্যারাডোনার চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে ছিলেন বেকেনবাওয়ার। এমনি এমনি তো আর তিনি সম্রাট নন!