চিকিৎসক সংকটের কারনে সাতক্ষীরার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। কিডনি রোগ, ক্যান্সার বিষেশজ্ঞ, চর্মরোগ বিষেশজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানসহ গুরুত্বপুর্ন ৪০টি চিকিৎসকের পদ শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। এছাড়া চিকিৎসা যন্ত্রপাতির বরাদ্ধও পাওয়া যাচ্ছেনা। এতে করে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ রোগী। প্রতিদিন বহির্বিভাগে দুর-দুরন্ত থেকে আশা বিভিন্ন রোগি চিকিৎসা করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরী ভাবে চিকিৎসক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বরাদ্ধ চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে বার বার লিখিত ভাবে জানিয়ে ও কোনো লাভ হচ্ছে না। সাতক্ষীরার আইলা দুর্গত পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রাম থেকে চর্মরোগ চিকিৎসা করার জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন গৃহবধু মনজিলা বেগম ও তার মেয়ে আকলিমা খাতুন। লবণ পানির নদীতে মাছ ধরা কাজ করার কারনে তাদের শরীরে চর্মরোগ দেখা দেয়। তারা এসেছিলেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্ত হাসপাতালে কোনো চর্মরোগ বিষেশজ্ঞ না থাকায় তারা ফিরে যান চিকিৎসা সেবা না পেয়ে।গৃহবধু মনজিলা বেগম জানান, স্বামী কামলা খেটে যা উপার্জন করে তা দিয়ে সংসার চলেনা। ফলে প্রাইভেট ভাবে ডাক্তার দেখানোর সামর্থ নেই তাদের। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাটিয়া গ্রামের গৃহবধু হালিমা বেগম জানান, কোমরের চিকিৎসা করার জন্য
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। হাসাপাতালের অর্থপেডিক্স চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান পলাশ তাকে দেখে জরুরী ভাবে কোমরে অপারেশন করার পরামর্শ দেন। কিন্ত হাসপাতালে এই জাতীয় বা কোমরের অপারেশন করা সিয়াম মেশিনটি দীর্ঘদিন যাবত নষ্ট থাকায় ডাক্তার তাকে অন্য কোথাও থেকে জরুরী অপারেশন করার পরামর্শ দেন। গৃহবধু হালিমা বেগম জানান, বেসরকারী ভাবে কোমরের অপারেশন খরচ কমপক্ষে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দরকার। যা তার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভাব নয়।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসাপালের পরিচালক ডাক্তার কুদরত-ই খোদা জানান, ৫০০ শয্যা হাসপাতালটিতে চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে তীব্র । তিনি বলেন, কিডনি, ক্যান্সার বিষেশজ্ঞ, নিউরো সার্জারী, চর্মরোগ বিষেশজ্ঞ, মনোবিজ্ঞান, সহকারী সার্জন ১০ জন, মেডিকেল অফিসার ১০জনসহ ৪০টি গুরুত্বপুর্ন চিকিৎসকের পদ শুন্য রয়েছে কয়েক বছর ধরে। তিনি আরো বলেন, জরুরী ভাবে এসব চিকিৎসক বরাদ্ধ চেয়ে একাধিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে পত্র প্রেরণ করেও কোনো লাভ হচ্ছেনা। ফলে সেবা প্রত্যাশীদের কাঙ্কিত সেবা দেয়া সম্ভাব হচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রতিদিন সাতক্ষীরা জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে প্রচুর রোগী আসে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্ত চিকিৎসক না থাকায় এসব রোগি বহির্বিভাগ থেকে ফিরে যাচ্ছেন চিকিৎসা সেবা না পেয়ে।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জানান, চিকিৎসকসহ নানা সংকটের কারনে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি বরাদ্ধ পাওয়া যাচ্ছেনা কেন এই হাসপাতালে? একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াটা। কিন্ত বছরের পর বছর নানা ধরনের সংকট রয়েছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিনি জরুরী ভাবে চিকিৎসক বরাদ্ধসহ অন্যান্য সমস্যা নিরোশন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করেন।