আজ মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
Logo সাতক্ষীরার অবৈধ ইটভাটার মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা Logo স্বামীর বাড়ি থেকে দুই সন্তানের জননী নিখোঁজ: থানায় অভিযোগ  Logo অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরা সীমান্তে দুই নারীসহ আটক ৩ Logo তালায় মোবাইল শোরুমে দুঃসাহসিক চুরি Logo শ্যামনগরে অপহৃত নারী উদ্ধার, দুই অপহরণকারি গ্রেপ্তার Logo রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে Logo হত‍্যা মামলায় সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাবু আটক Logo সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ Logo আবু সাঈদ হত্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ শিক্ষার্থীকে শাস্তি Logo সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসকের কর্মসম্পাদনে সহয়তা প্রদানে গঠিত কমিটির সভা
বিজ্ঞাপন দিন
জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টালে যে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন। মেসার্স রুকাইয়া এড ফার্ম -01971 211241

সাতক্ষীরায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, সতর্ক থাকার আহ্বান চিকিৎসকদের

  • রিপোর্টার
  • আপডেট সময়: ০৫:০৬:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরায় শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তার সাথে হিমেল ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়াতে তীব্রতর হচ্ছে শীতের প্রকোপ। জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রচন্ড শীত ও কনকনে ঠান্ডায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি শিশুরা। তবে বৃদ্ধরাও রয়েছেন নানা সমস্যাতে। কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতে একদম জবুথবু অবস্থা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। এদিকে, শীতের প্রকোপ গত কয়েকদিনে বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধির তথ্য দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

প্রচণ্ড এই শীতে ঠান্ডা জনিত রোগ শুরু হয়েছে। সাতক্ষীরার শিশু হাসপাতালসহ রোগীর চাপ বেড়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও শহরের প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে সাথে যুক্ত হয়েছে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের ভীড় । সবেচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ। সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জনের বেশি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ঠান্ডা জনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে চিকিৎসকরা অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ঘুরে চোখে পড়ে শীতের প্রকোপের সাথে সাথেই বেশির ভাগ শিশুরা সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগে বাদ পড়ছে না বয়স্ক মানুষেরাও। গত ১ সপ্তাহে বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুধুমাত্র শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৬হাজারেরও বেশি। হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় নবজাতক ও শিশুদের মধ্যে নানা ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। আগের চেয়ে আউটডোরে রোগীর চাপ বাড়ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী শিশু। অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে।

সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ৩০ বেডের বিপরীতে বর্তমানে শিশু ভর্তি রয়েছে ৪৫ জন। ফলে ওয়ার্ডের অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৪টি বেডের বিপরীতে ভর্তি আছে ৩৫জন রোগী যেটি বিগত ৭দিন আগে ছিল ৭০জন শিশু। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫ টি বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ২৪ জন। যেটা বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এই প্রচন্ড শীতে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।

বহির্বিভাগের সামনে এক শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আমেনা খাতুন নামে এক নারী। তিনি বলেন, বাচ্চাটা কয়েকদিন ধরে পাতলা পায়খানা হচ্ছে যার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। আশাশুনি থেকে সামছুর নাহার নামের ছয় মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তিনি। মেয়েকে নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি বলেন, প্রথমে জ্বর হলে আমাদের ওখানকার গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তার সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন ।

পাটকেলঘাটা থেকে ১বছর বয়সী ফাতিনকে নিয়ে এসেছেন তার মা তজমিন সুলতানা। তিনি বলেন, সাত-আটদিন ধরে ঠাণ্ডা, কাশি কিছুতেই কমছে না। এজন্য এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে কাটিয়া থেকে আসা বৈশাখী নামের এক মহিলা তার ৭ দিনের শিশুকে নিয়ে। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়।

সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ মেরিনা সুলতানা বলেন, ঠান্ডা পড়ার কারণে আমাদের এখানে রোগীর চাপ প্রচন্ড বেশি।আমাদের এখানে ১৪টি বেডের বরাদ্দ আছে কিন্তু শিশু ভর্তি আছে ৩৫ জনেও বেশি। অধিকাংশ বাচ্চাদের সর্দি-কাশি জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ শান্তনা মন্ডল বলেন, এই কয়েক দিনের শীতের কারণে শিশু ডায়রিয়া রুগী বাড়তেই আছে। আমাদের এখানে ৫টা বেড বরাদ্দ আছে কিন্তু রোগী ভর্তি আছে ২৪ থেকে ৩০জন। যার কারণে সব কিছু সামাল দিতে একটু ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

ডাঃ মোঃ আবুল বাশার আরমান, ইনচার্জ সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল বলেন, অনুন্নত ইনন সিস্টেমের কারণে যে কোন ধরনের আবহাওয়া পরিবর্তন বড়রা যেমন সহজে মানিয়ে নিতে পারে, শিশুরা তেমনটা পারে না। এই শীতে বাচ্চাদের সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া এই ধরনের রোগ গুলো পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে রোটা ভাইরাসের কারণে যে ডায়রিয়া টা হয় এই ধরনের রোগী আমরা বেশি পাচ্ছি। সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে আমরা প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি এবং যাদের অবস্থা বেশি খারাপ তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকের সেবা দিচ্ছি।

তিনি বাবা মায়েদের প্রতি পরামর্শ হিসেবে বলেন, এই ঠান্ডা আবহাওয়াতে বাচ্চাদের ঘর থেকে বাহির না করাই নাই ভালো এবং পর্যন্ত শীতের পোশাক পরিয়ে রাখবে। বাচ্চাদেরকে বিশুদ্ধ পরিষ্কার পানি খাওয়াবে এবং বাজারের খাবার, বাসি, খোলা, পচা খাবার না খাওয়ার জন্য পরামর্শ থাকবে। আমরা সাতক্ষীরায় শিশু হাসপাতাল যথেষ্ট পরিমাণে এলার্ট আছি। যেকোন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ডাঃ মীর মাহফুজ আলম, সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার বলেন, প্রচন্ড শীতের কারণে সর্দি, কাশি,জ্বর নিয়ে বেশি রোগী আসতেছে। সাথে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া রোগী প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। রোগীর সংখ্যা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। পরামর্শ হিসেবে বলেন, শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। শিশুর প্রতি মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে। গায়ে গরম কাপড় ছাড়াও হাত পায়ে মোজা পরাতে হবে। শীতজনিত রোগের বেশিরভাগই স্বল্পমেয়াদী ও সহজ চিকিৎসায় সেরে যায়। বিধায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা অন্য যে কোনো ওষুধ সেবন না করার আহবান জানিয়েছেন তারা।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সালাম বলেন, বাংলাদেশে বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে। এই ঠান্ডার কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর, শিশু ডায়রিয়া বেড়েই চলেছে । আমারা ঠান্ডার কথা মাথায় রেখেই বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক আছি। আমাদের এখানে এখনো পর্যন্ত ঠান্ডা জনিত কারণে কোন শিশুর মৃত্যু ঘটেনি। আমরা বিগত দুই সপ্তাহ ধরে ঠান্ডার জনিত পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা প্রতিদিন শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১৫০ জনেরও বেশি রোগীর সেবা দিচ্ছি এবং সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতাল গুলোতেও আমাদের ডাক্তাররা নিরলস ভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই শীতকালীন রোগ প্রতিহত করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে অভিভাবকদের। একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে কোনভাবেই শিশুকে ঠান্ডা খাবার, পচা, বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে শিশুর উপর। আমাদের সাতক্ষীরা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যন্ত ঔষধ সরবরাহ আছে।

ট্যাগস:

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সাতক্ষীরার অবৈধ ইটভাটার মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

সাতক্ষীরায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, সতর্ক থাকার আহ্বান চিকিৎসকদের

আপডেট সময়: ০৫:০৬:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫

সাতক্ষীরায় শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তার সাথে হিমেল ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়াতে তীব্রতর হচ্ছে শীতের প্রকোপ। জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রচন্ড শীত ও কনকনে ঠান্ডায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি শিশুরা। তবে বৃদ্ধরাও রয়েছেন নানা সমস্যাতে। কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতে একদম জবুথবু অবস্থা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। এদিকে, শীতের প্রকোপ গত কয়েকদিনে বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধির তথ্য দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

প্রচণ্ড এই শীতে ঠান্ডা জনিত রোগ শুরু হয়েছে। সাতক্ষীরার শিশু হাসপাতালসহ রোগীর চাপ বেড়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও শহরের প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে সাথে যুক্ত হয়েছে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের ভীড় । সবেচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ। সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জনের বেশি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ঠান্ডা জনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে চিকিৎসকরা অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ঘুরে চোখে পড়ে শীতের প্রকোপের সাথে সাথেই বেশির ভাগ শিশুরা সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগে বাদ পড়ছে না বয়স্ক মানুষেরাও। গত ১ সপ্তাহে বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুধুমাত্র শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৬হাজারেরও বেশি। হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় নবজাতক ও শিশুদের মধ্যে নানা ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। আগের চেয়ে আউটডোরে রোগীর চাপ বাড়ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী শিশু। অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে।

সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ৩০ বেডের বিপরীতে বর্তমানে শিশু ভর্তি রয়েছে ৪৫ জন। ফলে ওয়ার্ডের অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৪টি বেডের বিপরীতে ভর্তি আছে ৩৫জন রোগী যেটি বিগত ৭দিন আগে ছিল ৭০জন শিশু। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫ টি বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ২৪ জন। যেটা বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এই প্রচন্ড শীতে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।

বহির্বিভাগের সামনে এক শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আমেনা খাতুন নামে এক নারী। তিনি বলেন, বাচ্চাটা কয়েকদিন ধরে পাতলা পায়খানা হচ্ছে যার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। আশাশুনি থেকে সামছুর নাহার নামের ছয় মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তিনি। মেয়েকে নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি বলেন, প্রথমে জ্বর হলে আমাদের ওখানকার গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তার সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন ।

পাটকেলঘাটা থেকে ১বছর বয়সী ফাতিনকে নিয়ে এসেছেন তার মা তজমিন সুলতানা। তিনি বলেন, সাত-আটদিন ধরে ঠাণ্ডা, কাশি কিছুতেই কমছে না। এজন্য এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে কাটিয়া থেকে আসা বৈশাখী নামের এক মহিলা তার ৭ দিনের শিশুকে নিয়ে। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়।

সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ মেরিনা সুলতানা বলেন, ঠান্ডা পড়ার কারণে আমাদের এখানে রোগীর চাপ প্রচন্ড বেশি।আমাদের এখানে ১৪টি বেডের বরাদ্দ আছে কিন্তু শিশু ভর্তি আছে ৩৫ জনেও বেশি। অধিকাংশ বাচ্চাদের সর্দি-কাশি জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ শান্তনা মন্ডল বলেন, এই কয়েক দিনের শীতের কারণে শিশু ডায়রিয়া রুগী বাড়তেই আছে। আমাদের এখানে ৫টা বেড বরাদ্দ আছে কিন্তু রোগী ভর্তি আছে ২৪ থেকে ৩০জন। যার কারণে সব কিছু সামাল দিতে একটু ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

ডাঃ মোঃ আবুল বাশার আরমান, ইনচার্জ সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল বলেন, অনুন্নত ইনন সিস্টেমের কারণে যে কোন ধরনের আবহাওয়া পরিবর্তন বড়রা যেমন সহজে মানিয়ে নিতে পারে, শিশুরা তেমনটা পারে না। এই শীতে বাচ্চাদের সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া এই ধরনের রোগ গুলো পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে রোটা ভাইরাসের কারণে যে ডায়রিয়া টা হয় এই ধরনের রোগী আমরা বেশি পাচ্ছি। সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে আমরা প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি এবং যাদের অবস্থা বেশি খারাপ তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকের সেবা দিচ্ছি।

তিনি বাবা মায়েদের প্রতি পরামর্শ হিসেবে বলেন, এই ঠান্ডা আবহাওয়াতে বাচ্চাদের ঘর থেকে বাহির না করাই নাই ভালো এবং পর্যন্ত শীতের পোশাক পরিয়ে রাখবে। বাচ্চাদেরকে বিশুদ্ধ পরিষ্কার পানি খাওয়াবে এবং বাজারের খাবার, বাসি, খোলা, পচা খাবার না খাওয়ার জন্য পরামর্শ থাকবে। আমরা সাতক্ষীরায় শিশু হাসপাতাল যথেষ্ট পরিমাণে এলার্ট আছি। যেকোন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ডাঃ মীর মাহফুজ আলম, সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার বলেন, প্রচন্ড শীতের কারণে সর্দি, কাশি,জ্বর নিয়ে বেশি রোগী আসতেছে। সাথে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া রোগী প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। রোগীর সংখ্যা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। পরামর্শ হিসেবে বলেন, শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। শিশুর প্রতি মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে। গায়ে গরম কাপড় ছাড়াও হাত পায়ে মোজা পরাতে হবে। শীতজনিত রোগের বেশিরভাগই স্বল্পমেয়াদী ও সহজ চিকিৎসায় সেরে যায়। বিধায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা অন্য যে কোনো ওষুধ সেবন না করার আহবান জানিয়েছেন তারা।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সালাম বলেন, বাংলাদেশে বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে। এই ঠান্ডার কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর, শিশু ডায়রিয়া বেড়েই চলেছে । আমারা ঠান্ডার কথা মাথায় রেখেই বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক আছি। আমাদের এখানে এখনো পর্যন্ত ঠান্ডা জনিত কারণে কোন শিশুর মৃত্যু ঘটেনি। আমরা বিগত দুই সপ্তাহ ধরে ঠান্ডার জনিত পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা প্রতিদিন শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১৫০ জনেরও বেশি রোগীর সেবা দিচ্ছি এবং সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতাল গুলোতেও আমাদের ডাক্তাররা নিরলস ভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই শীতকালীন রোগ প্রতিহত করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে অভিভাবকদের। একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে কোনভাবেই শিশুকে ঠান্ডা খাবার, পচা, বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে শিশুর উপর। আমাদের সাতক্ষীরা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যন্ত ঔষধ সরবরাহ আছে।