সাতক্ষীরা কলারোয়ায় ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে ফসলি জমির ভূগর্ভস্থ থেকে অবাধে রাষ্ট্রীয় সম্পদ তথা বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, কলারোয়া উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নের কামকুলার বিল থেকে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে একটি চক্র ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে অবলীলায় বালু উত্তোলন করছে। খাসপুর গ্রামের জুলু মেম্বারের ফসলি জমির ভূগর্ভস্থ থেকে টাকার বিনিময়ে স্থানীয় শাহীন মেম্বারের তত্বাবধানে ৩ সপ্তাহ ব্যাপি অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন করে উপজেলার খাসপুর গ্রামের “খাসপুর লাঙ্গলঝাড়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিমুখে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল এল,জি,ইডি রাস্তার গাঁ ঘেঁষে দুইটি পয়েন্টে পাইপের সাহায্যে বালু রাখা হচ্ছে। শাহীন মেম্বারের বক্তব্য অনুযায়ী ভূগর্ভস্থ থেকে ড্রেজার মেশিন বলগেট দিয়ে উত্তোলনকৃত বালু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল “এল,জি,ইডির” নতুন রাস্তা নির্মানের জন্য রাস্তা ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হবে। তিনি বলেন, প্রথমদিকে আমি ৬ টাকা ফুট চুক্তিতে ড্রেজার মেশিন (বলগেট) ভাড়া নিয়ে বালু উত্তোলন করেছিলাম। কিন্ত বর্তমানে আমি আর বালু উত্তোলন করছি না। এখন বালু উত্তোলনের দায়িত্ব নিয়েছে কলারোয়া উপজেলার ঝিকরা গ্রামের রিংকু, আশিক একই উপজেলার তুলসীডাঙ্গা গ্রামের শহীদুল ও আসাদুল। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভূগর্ভস্থ থেকে ড্রেজার মেশিন বলগেট দিয়ে অতিমাত্রায় বালু উত্তোলনের ফলে যেকোনো সময় ভূমি ধ্বসের সৃষ্টি হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, দলীয় প্রভাব বিস্তার করে এবং সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে একটি চক্র অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন করছে। তারা বলেন, নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির নিমিত্তে বালু মহল থেকে বালু ক্রয় না করে ফসলি জমি থেকে ড্রেজার মেশিন বলগেট দিয়ে অধিক লাভের আশায় বশীভূত হয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আহরণ করছে। তারা আরও বলেন, ভূগর্ভস্থ থেকে উত্তোলনকৃত বালু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন উল্লেখিত ব্যক্তিরা। এছাড়া এলাকায় এই চক্রটি অবৈধ বালু উত্তোলনে দিনকেদিন বেপরোয়া স্বভাবের হয়ে উঠেছে। সচেতন মহল সহ সুশীল সমাজের মতে, অতিদ্রুত ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করার পাশাপাশি অবিলম্বে এসব বালু খাদকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি আবশ্যক। এদিকে এলাকাবাসী এসব অবৈধ প্রক্রিয়ায় বালু উত্তোলন কারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
“ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে” অধিক মাত্রায় ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে ফসলি জমি, জনবসতি এমনকি নদ নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণী কুলে নেতিবাচক পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানি,বায়ু দূষণ, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভূমি ধ্বসের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে এসব নেতিবাচক প্রভাবের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ দিনকেদিন বিপন্নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনে সৃষ্ট বায়ু দূষণে প্রতিনিয়ত মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে উদ্ভিদ ও প্রানী কুলের মধ্যে পরিবর্তন হওয়ার কারনে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে মৎস্য প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যপক হারে পাল্টে যাচ্ছে। নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পানি দূষণ ও নদী গর্ভের গঠন প্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন নদ- নদী ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। অবাধে বালু উত্তোলনের নিকটবর্তী স্থানে মাটির ক্ষয় হওয়ার পাশাপাশি মাটির গুনাগুন নষ্ট হচ্ছে। বালু উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে নলকূপের পানি পাওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। বালু উত্তোলনের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে ব্যপক হারে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে যা আগামী প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
এ বিষয় কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, ফসলি জমির ভূগর্ভস্থ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন সম্পুর্ণভাবে অবৈধ। তিনি বলেন, জনস্বার্থে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংবাদ শিরোনাম:
বিজ্ঞাপন দিন
সাতক্ষীরায় ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন
- রিপোর্টার
- আপডেট সময়: ১২:১১:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
- ১১ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস:
জনপ্রিয় সংবাদ