এসিড সারভাইভরা সমাজের বোঝা নয়, তারা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছে। এসব সারভাইভররা প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধ জয়লাভ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। এসব সারভাইভরা সমাজের মূল স্রোতের সাথে এক কাতারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা বর্তমানে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এখন এসব মানুষের জন্য দরকার সকল প্রকার সহযোগিতা। আমরা যারা সমাজের মূল স্রোতে বসবাস করি তাদের নৈতিক দায়িত্ব এসব সারভাইভরদেও সহযোগিতা করা। যারা মানুষের শরীরে এসিড নিক্ষেপ করে তারা পশু। তারা সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ না এসিডদগ্ধ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সারাটা জীবন যে কতটা যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে সে ছাড়া অন্য কেউ বলতে পারবে না। চরম নৈতিকতার অভাব হলেই একজন মানুষ আর একজন মানুষকে এসিড ছুড়ে মারে। আমরা চাই না আর একটিও এসিড আক্রান্তের ঘটনা ঘটুক। এসিড আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু এখন ঘুঁরে দাড়িয়েছে। সাতক্ষীরায় সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্কের বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা সম্প্রতি আগষ্ট মাসে কালিগঞ্জের জাহানারা খাতুনের উপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় অভিযুক্ত আসামী আব্দুল হামিদ ও সাগর প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার নাকরায় বাদীপক্ষ আশংকায় রয়েছেন এবং মামলার সুবিচার না পাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন।
২৯ অকোটবর ২০২৪ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্ক, সাতক্ষীরার (এসবিজিএন) উদ্যোগে উন্নয়ন সংগঠন স্বদেশ ও দাতা সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ’র সাতক্ষীরা এল্লারচর মৎস্য খামার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এসবিজিএন’র বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দীপালোক একাডমী ও এক্টিভিস্তা ইয়ুথ গ্রুপ নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে এবং এসিড সারভাইভররা মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফ্যাশান শো প্রদর্শন করে।এসিড সারভাইভর নারী-পুরুষ ও শিশুরা অংশগ্রহণ করেন। সাধারণ সভায় জানানো হয়, সাতক্ষীরা জেলায় বর্তমানে ১৬৪ জন এসিড সারভাইভর আছেন। যাদের মধ্যে ১১৬ নারী ও পুরুষ ৪৮ জন। এদের মধ্যে শিশুরাও আছে।
সভায় প্রধান অতিথি নির্বাহি ম্যজিট্রেট প্রনয় কুমার বক্তব্যে বলেন, ‘এসিড সারভাইভররা যে কোনে সাহায্যের জন্য জেলা প্রশাসকের সহায়তা নিতে পারবেন। কোনো সহায়তার আবেদন করলে আমি চেষ্টা করবো তাদেরকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে’। তিনি শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতার আশ^াস দেন। সভায় বিশেষ অতিথি একশনএইডের জেন্ডার ইক্যুইটি এন্ড ওমেন রাইটস ম্যানেজার মরিয়মনেসা বলেন, একসময় এসিড আক্রান্ত ব্যক্তিরা সমাজের মূল স্রোতের মানুষের সাথে মিশতে পারতো না। সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। তারা নিজেরদেরকে আড়াল করে রাখতো। এখন সেই পরিস্থিতি নেই, তারা ঘুরে দাড়িয়েছে। নিজেরা বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। দেশ-বিদেশ থেকে তাদের সেসব উদ্যোগ দেখতে মানুষ আসছে। বর্তমানে এসডি আক্রান্ত শিশুরা লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষিত হচ্ছে। স্বদেশ ও একশনএইড বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে সহায়তার মাধ্যমে যে কর্মসূচি সাতক্ষীরা বাস্তবায়ন করছে। আশা করা যায় আগামীতে এই কর্মসূচির মাধ্যমে সুবিধাভোগির সংখ্যা বাড়বে।
একশন এইডের সিনিয়র প্রগ্রাম অফিসার নুরুন্নাহারের সঞ্চালনায় সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বদেশ’র নিবাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত।অন্যান্য অতিথি ছিলেন মৎস্য খামার কর্মকর্তা শফিকুল আসলাম, মহিলা অধিদপ্তরের রাজিয়া সুলতানা, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপ্পী, অন্যান্য অতিথি বক্তা ছিলেন প্রথমআলো জেলা করসপন্ডেন্ট কল্যান ব্যানার্জী, ব্র্যাক এর জেলা প্রতিনিধি আশরাফ হোসেন, মহিলা পরিষদের জ্যোৎস্না দত্ত, সিডো সংস্থার নির্বাহি শ্যামল বিশ্বাস, নাগরিক প্রতিনিধি আলীনুরখান বাবুল, উন্নয়ন সহযোগী মারুফ হোসেন এজিএম, মৌসুম ইসলাম, মানবজমীনের জেলা প্রতিনিধি বিপ্লব হোসেন, গ্লোবাল টিভি প্রতিনিধি রাহাত রাজা , সমাজকর্মী সাকিবুর রহমান প্রমুখ। সভায় নেটওয়ার্কের পক্ষথেকে ধারনাপত্র পাঠ করেন সারভাইভর বিলসি নাহার।