আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ নেতার ব্যক্তিগত অফিস ভাংচুর, ক্রয়কৃত বাসা ও মৎস্য ঘের জবর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ ভাংচুর করা ও মালামাল লুটপাট আটকে দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় রাখার ব্যবস্থা করেছে।আশাশুনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শম্ভুজিত মন্ডল জানান, আঃ মজিদের ছেলে তৌহিদুর রহমান কাটাখালী মৌজার ৭৭ শতক জমি বিক্রয়ের জন্য বায়নাপত্রে স্বাক্ষর করে আমার হিসাবের খাতায় সহি স্বাক্ষর করে দিয়ে বিভিন্ন সময় ১৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা গ্রহন করেন। এরপর কলেজের পিছনে বাড়ির জমি স্ট্যাম্পে লেখাপড়া করে দিয়ে ৭ লক্ষ টাকা গ্রহন করে ১০ শতক জমির পজেশন হস্তান্তর করেন ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর। আমি বাড়িটি অনেক টাকা খরচ করে সুন্দর করে গড়ে তুলি। এরপর তৌহিদ লিখিত চুক্তিপত্রে ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস করতে থাকেন। তার চাচা, ভাইরা ভারতের নাগরিক হওয়ায় লিখে দিতে না পেরে আমার নিকট থেকে কোন টাকা নেয়নি মিথ্যা দাবী করে আদালতে ২/১০/২৪ তাং ১৭৬৭২৪ নং মামলা করলে বিজ্ঞ আদালত সিআইডির উপর তদন্তের আদেশ করেন। তদন্ত শেষে সিআইডি অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় রিপোর্ট দাখিল করেন। এছাড়া তৌহিদুর পুনরায় ২ লক্ষ টাকা গ্রহন করে ৪৫৪/২৪ নং কোবালা দলিল বেজিস্ট্রী করে দেয়। অপরদিকে তার (শম্বুজিত এর) ৭৭ শতক জমির পাশে তাদের ৪ বিঘা জমি বিবেকানন্দ মন্ডল ওরফে লিটনের কাছে ২০২৪ সালে ৩ বছরের জন্য ডিড করে দিয়ে ১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা তৌহিদুর গ্রহন করে। ডিড নিয়ে লিটন মাছ চাষ শুরু করে। কিন্তু গোপনে তৌহিদ ঘের দখলের ষড়যন্ত্র করতে থাকলে লিটন বাদী হয়ে আদালতে ১৭৬৭/২৪ নং ১৪৫ ধারা মামলা করেন। তারপরও তৌহিদ আদালতকে তুয়াক্কা না করে ২২ আগষ্ট ঘেরে জবর দখলে যায়। বাধ্য হয়ে আদালতে ১৮৮ ধারায় আবেদন করলে আদালত থানা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশাশুনিকে শান্তি শৃংখলা রক্ষা ও তদন্তেন আদেশ করেন। তারপরও তৌহিদ আইন অমান্য করে ২৫ অক্টোবর শম্ভুজিত মন্ডলের টাইলস, থাই গ্রাস বসানো অফিস ভেঙ্গে বিক্রয় করতে থাকলে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থানে গিয়ে মালামাল আটকে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুভাস মন্ডলের জিম্মায় রাখেন।
ডিড নিয়ে মৎস্য ঘেরে মাছ চাষকারী লিটন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি ডিড নিয়ে বৈধ ভাবে মৎস্য ঘেরে মাছ চাষ করছি। কিন্তু ডিডদাতা বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আমার ঘের জবর দখল করে ডিড দেয়াসহ শম্ভুজিত মন্ডলের ক্রয়কৃত জমির ঘেরের মাছ ধরে নিয়ে আত্মসাত করে চলেছে। অফিস ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাই প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আদালতের সহায়তার অপেক্ষায় আছি।জবর দখলকারী তৌহিদুর রহমান বলেন, শম্ভু বাবু ২২-২৩ সালে ডিড নিয়ে ঘের করেন। ২৪ সালে লিটন ৫ বছরের জন্য ডিড নিয়ে ৩ বছরের হারির টাকা শোধ করেন। অপরদিকে শম্ভুজিত মন্ডল কাটাকালি মৌজায় ৭৭ শতক জমি ক্রয় করেন। তবে এ্যাওয়াজ করে কলেজের পাশের জমি দখল নেন। আবার আশরাফ গাজী সাহেবের কাটাখালি মৌজার ঐ ৭৭ শতক জমির মধ্যে ৫০ শতক এ্যাওয়াজ করে বদরতলার ৫০ শতক জমি ছেড়ে দিয়েছেন। কাটাখালীর বাকী ২৭ শতক জমির হারি আমার বোন নিয়ে থাকে বলে তিনি (তৌহিদ) স্বীকার করলেও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেন। অপরদিকে কলেজের পাশে (হস্তান্তরকৃত বাড়ির পজেশান) শম্ভুজিত মন্ডল অফিস ঘর তৈরি করে ব্যবহার করে এসেছেন। গত শুক্রবার ঘরটি ভাংচুর করা হয়, তবে তিনি নন, কলেজের জমি দাবী করে শিক্ষকরা জনমজুর দিয়ে ভাংচুর করা হয় বলে তিনি জানান। ভাড়া চুক্তিতে বসবাস করা ঘরে বসবাসের পর ছেড়ে যেয়ে বসত ঘর ও মৎস্য ঘের দখল করলেন কেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে ঘরে উঠিয়ে দিয়েছেন।
শোভনালী ইউপি চেয়ারম্যান মাওঃ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তৌহিদুর কাগজপত্র নিয়ে আমার কাছে আসলে আমি থানা-আর্মি ক্যাম্পে যেতে বলি। থানা থেকে আমাকে মোবাইলে বলেন, কাগজপত্র দৃষ্টে জমি তৌহিদুরের জানাগেছে। আপনি তাকে ঘরে যাওয়ায় সহযোগিতা করেন। আমি বলি আপনি বললে সেটাই যথেষ্ট, আমাকে দখল দিতে যেতে হবে কেন। তখন তৌহিদ নিজেই ঘরে উঠেছে। আমি সেখানে যায়নি।