রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নিজের কাছে নেই। তিনি বলেছেন, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই।
তবে গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী আসসালামু আলাইকুম, আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’
দুই মাসের ব্যবধানে রাষ্ট্রপ্রধানের এই দ্বিমুখী বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজালের। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। সাবেক একনায়ক হাসিনা সত্যিই কি পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করে থাকলে তার পদত্যাগপত্রই বা কার কাছে? মানুষের মনে এমন নানা প্রশ্ন নতুন করে জাগছে।
তবে রাষ্ট্রপতির এমন দ্বিচারিতামূলক আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আন্দোলনের সমন্বয়ক, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছিল স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা। পদত্যাগপত্র নিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার কথা থাকলেও ছাত্র-জনতা গণভবনের কাছাকাছি চলে আসলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় খুনি হাসিনা।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আর রাজনীতি করার জন্য দেশে ফিরতে পারবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এক ভিডিও বার্তায় হাসনাত বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শক্তির উত্থান ও পুনর্বাসন ঠেকাতে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।
হাসনাত বলেন, আপনারা দেখেছেন রাষ্ট্রপতি বলেছেন শেখ হাসিনা তার কাছে কোনো পদত্যাগপত্র জমা দেননি। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন আবারও বিভিন্ন পাঁয়তারা শুরু করেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা স্বৈরাচারের পতিত আত্মারা বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমাদের একটাই পরিচয় ছিল আওয়ামী লীগ ছিল জালিম আর আমরা ছিলাম মজলুম। কিন্তু ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে আমরা পৃথক হয়েছে যার কারণে একটি গ্যাপ তৈরি হয়েছে। যার কারণে এই গ্যাপটির সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমাদের আবার একত্রিত হতে হবে। আমরা যদি দলীয় স্বার্থে যদি আলাদা হয়ে যাই তাহলে আওয়ামী লীগ আবারও সুযোগ নিবে। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের কোনো দালিলিক প্রমাণ নিজের কাছে নেই বলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের করা মন্তব্যের প্রতিবাদে কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমও।
সারজিস আলম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা হয়ত ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারণে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে পারিনি। সে অর্থে বিপ্লবী সরকার বা জাতীয় সরকার গঠন করতে পারিনি। যে কারণে চুপ্পুর মতো মানুষ এখনও প্রেসিডেন্টের মতো পদে বসে আছে। তার মতো মানুষ, আজকে তিনি বলছেন শেখ হাসিনার রিজাইন পেপার নাকি তিনি দেখেননি। কোন সাহসে তিনি এ কথা বলতে পারেন?’
‘শেখ হাসিনার রিজাইন পেপার যদি তিনি নিজে না দেখেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কী করা দরকার, কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তার জায়গা কোথায় হওয়া দরকার সেটা বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ নতুন করে নির্ধারণ করবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, রাষ্ট্রপতি যে দ্বিমুখী বক্তব্য দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট যে তিনি শেখ হাসিনাকে বৈধতা দিতে চান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতির এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে বলেও উল্লেখ করেন মাহিন। তিনি বলেন, আমরা অফিসিয়ালি দ্রুতই আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাব। আজ বিকালেই দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস এবং শহরে বিক্ষোভ হবে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি আসবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
উপদেষ্টা বলেন, তার এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে যাবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংবাদ শিরোনাম:
বিজ্ঞাপন দিন
শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই!
- রিপোর্টার
- আপডেট সময়: ০১:৫০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
- ৩৬ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস:
জনপ্রিয় সংবাদ