সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্রের (টিটিসি) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে এম মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ভবন সংস্কারের নামে ভুয়া টেন্ডার ও ভাউচার, সকল মালামাল ক্রয়ে ঘুষ গ্রহন, নিয়োগে বানিজ্য, বিভিন্ন ট্রেডে ঘুষ নিয়ে ভর্তি, পিডিও ভর্তির সরকারী টাকাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় অর্ধকোটি টাকার অনিয়ম-দূনীর্তির অভিযোগ উঠেছে। আর এসব দূর্নীতির সহযোগি হিসেবে কাজ করেছেন সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি টিটিসি’র সাবেক জব প্রেসমেন্ট অফিসার (জেপিও) বর্তমানে চাকুরী নেই আরিফুল ইসলাম। অনুসন্ধানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাতক্ষীরা কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কে এম মিজানুর রহমান ২০২০ সালের ২৩ জুলাই যোগদান করেন। যোগদানের পর সরকার ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে একাডেমিক ভবন, ডরমেটরি ভবন, টয়লেট মেরামত ও সংস্কার এবং রং করা বাবদ প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেন। কিন্তু ভবন সংস্কার ও মেরামত না করে নামেমাত্র ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার টয়লেট মেরামত করে নিজের ক্ষমতাবলে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরী করে বরাদ্দকৃত সরকারী সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বিষয়টি নিতিশ্চ করেছেন। অথচ ডরমেটরি ভবনের পেছনের ড্রেনলাইনসহ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর গাথুনি ও মাটি সরে যাওয়াতে ভবনটি বর্তমানে ঝুকিঁতে রয়েছে। যা এক্ষনে মেরামত ও সংস্কারের প্রয়োজন। (যা ছবি দেওয়া আছে)এছাড়া টিটিসি’র সকল ধরনের টেন্ডার ও ক্রয় থেকে তার ব্যক্তিগত শতকরা ১৫ টাকা সহ বিভিন্ন খ্যাতে ৩৫ টাকা ঘুষ গ্রহন করে এখন পর্যন্ত ৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে করে প্রশিক্ষনের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করতে না পারায় প্রশিক্ষন পরিচালনায় ব্যহত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকতার্রা জানান। এদিকে ৪র্থ শ্রেণির জনবলকে স্থায়ী চাকুরীর লোভ দেখিয়ে কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া স্থানীয়ভাবে সাবেক ফ্যাসিস সরকারের দলীয় লোক জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম (অত্র কেন্দ্রের এসইআইপি আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত জেপিও) এবং ওয়ার্কাস পাটির নেতা অজিত বাবু প্রায় ১৪ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা নিয়োগ বানিজ্য করেছে। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে এম মিজানুর রহমান আবারও এসইআইপি ও এএসএসইটি প্রকল্পে জনপ্রতি ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গ্রহন করে নিজের মত করে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওযা গেছে। যা ভুক্তভোগি বিভিন্ন পদে বিনা বেতনে নিয়োগ প্রাপ্ত ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী মিঠুন মন্ডল,মনোতোষ ঢালী,হাবিবুর রহমান,সুমন কুমার মন্ডল,রিমিতা রাণী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে আরিফুল ইসলাম টাকার নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, এসডিএফ এবং বিআরডিবি আবাসিক কোর্সের খাবারের দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম (সাবেক জেপিও)। যার বর্তমানে কোন চাকুরী নেই (কারণ ওই প্রকল্প বন্ধ) তবুও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তাকে বিভিন্ন কমিটিতে বিভিন্ন পদের নাম দিয়ে দায়িত্বে রেখে তার মাধ্যমে নিয়ম বহির্ভূত বিল ভাউচার স্বাক্ষর করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রায় ৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান তার স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারকে উক্ত কোর্সে অনিয়মভাবে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবাসিক হোস্টেলের খাবারের মান খারাব হওয়ায় ছাত্র মেহেদী,সালিমুনসহ অনেকেই তারা হোস্টেলে থাকেন না বলেও তারা জানান।এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সহায়তায় আরিফুল ইসলাম (সাবেক জেপিও) চাকুরী না থাকা সত্ত্বেও জব প্রেসমেন্ট অফিসারের নাম দিয়ে টিটিসি’র বিভিন্ন প্রশিক্ষনার্থীর বিদেশে পাঠানোর নামে তাদের পাসপোটসহ সবার নিকট থেকে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে টিটিসির ভিতরে অফিস নিয়ে এজেন্সির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেটি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম সত্যতা শিকার করেছেন। এ ছাড়া আরিফুলের বিরুদ্ধে কোন ট্রেডে যদি ভর্তি শুরু হয়। যদি ৩০ জন ভর্তি হয় । শুরু হওয়ার আগেই তিনি অধ্যক্ষের সুপারিশে ২০ জনের নামের তালিকা স্ব-স্ব ট্রেডের ইনচার্জেও নিকট জমা দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, পিডিও ভর্তি বাবদ ২০০ টাকার মধ্যে অনাভ্যন্তরীন প্রশিক্ষক সম্মানী/ উন্নয়ন বাবদ ৭০ টাকা কেটে নিয়ে নিজের মত আরিফুল ইসলামকে (সাবেক জেপিও) দিয়ে বিগত ৪ বছরে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ২৪০০০ জনের নিকট থেকে ১৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অথচ ওই টাকা প্রশিক্ষকদের দেওয়া হয়নি। এমনকি বিদেশগামিদের ওরিয়েন্টেশনে তাদের খাতা কলম বই বাবদ ৩৫ টাকা বরাদ্দ থাকলেও তাদেরকেও সেগুলো সঠিকভাবে দেওয়া হয়না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সরকারী গাড়ি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা,পরিবারকে নিয়ে বিকালে বা রাতে মার্কেটে যাওয়াসহ নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যা তার ড্রাইভার সবুজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সব মিলিয়ে সাতক্ষীরা টিটিসি’র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে এম মিজানুর রহমান দলীয় প্রভাব খাটিয়ে, চাপ প্রয়োগ করে অবৈধ টেন্ডার ,বিল ভাউচারে সংশ্লিষ্ট কর্মকতার্দের স্বাক্ষর নিয়ে বর্ননা মোতাবেক বিগত ৪ বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার এই অন্যায় অনিয়ম ও দূনীর্তির ফলে প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নষ্ট, প্রশিক্ষন প্রদানে ব্যহত এবং প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকতা ও কর্মচারী মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে টিটিসি’র সাবেক জব প্রেসমেন্ট অফিসার ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমার কোন চাকুরী নেই (গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বও থেকে)। জনবল কম থাকায় অধ্যক্ষ স্যার আমার বিভিন্ন সেক্টরে কাজে লাগায়। এমনকি মালামাল ক্রয়সহ একাধিক কমিটিতে অধ্যক্ষ স্যার আমার নাম দিয়েছেন। আমি দুই একজনের সুপারিশ করে চাকুরী দিয়েছি তবে কোন অর্থ নেই নাই। ওটা অধ্যক্ষ স্যারই ভালো জানেন। আবাসিক খাবারের দায়িত্বে আমি ও স্যারের স্ত্রী ফেরদৌসি আছি। এমনকি টিটিসিতে এজেন্সির ব্যবসার করার বিষয়টি তিনি সত্যতা স্বিকার করেন। এ সব বিষয়ে সাতক্ষীরা কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্রের (টিটিসি) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে এম মিজানুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে, তিনি বলেন- আমি এসব বিষয়ে কিছুই ভরতে পারবো না। পারলে আপনি আমাদের হেড অফিস থেকে জেনে নেন।
সংবাদ শিরোনাম:
বিজ্ঞাপন দিন
সাতক্ষীরা টিটিসি’র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ
- রিপোর্টার
- আপডেট সময়: ১০:৫৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- ৯৬ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস:
জনপ্রিয় সংবাদ