ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে কমেছে চিনির দাম। আগে যেখানে খুচরায় প্রতিকেজি চিনি ১৩৫ টাকায় বিক্রি হতো বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা থেকে ১২৭ টাকা পর্যন্ত। তার মানে প্রতিকেজি চিনিতে কমেছে ৮ থেকে ১০ টাকা। একইভাবে চিনির দাম কমেছে পাইকারি বাজারেও। এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ চিনি ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মুহাম্মদ নুরে আলম বলেন, ‘দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৭ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশের চিনি কারখানায় উৎপাদন হয় ৩০ থেকে ৩২ হাজার মেট্রিক টন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে একসময় ১৭টি চিনিকল ছিল। এর মধ্যে ১৯৯১ সালের দিকে দুটি কারখানা বেসরকারিতে দিয়ে দেওয়া হয়। লোকসান কমানোর জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে আরও ছয়টি কারখানার উৎপাদন স্থগিত করা হয়। বাকি ৯টি কারখানা বর্তমানে সচল আছে।’
বাংলাদেশ চিনি ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বাজারে চিনি বিক্রি করে পাঁচটি কোম্পানি। এগুলো হলো এস আলম গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ ও ইকলো। পাশাপাশি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) লাল চিনি বাজারে বিক্রি করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে কোম্পানি অনুযায়ী প্রতিকেজি চিনি ১১৮ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর থেকে চিনির দাম কমেছে। এর আগে প্রতিকেজি চিনি পাইকারিতে ১২২ টাকা থেকে ১২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।
অপরদিকে, সরকারি চিনি মিলগেটে বিক্রি করা হচ্ছে ১২৫ টাকা করে। এ দাম দীর্ঘদিন ধরে একই রকম আছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারেও চিনির দাম কমেছে। সে অনুযায়ী দেশে চিনির দাম আরও কমা উচিত ছিল।’
খাতুনগঞ্জ পি এন এন্টারপ্রাইজের মালিক এমদাদুল হক রায়হান বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের বাজারে বর্তমানে মেঘনা গ্রুপের প্রতিবস্তা (৩৭ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৪৩৫ টাকা, সিটি গ্রুপের চিনি চার হাজার ৪১৫ টাকা, এস আলমের চিনি চার হাজার ৩৬০ টাকা, দেশবন্ধু গ্রুপের চিনি চার হাজার ৩৫০ টাকা এবং ইকলো গ্রুপের চিনি চার হাজার ৪০৫ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চিনির বাজার নিম্নমুখী। বাজারে চাহিদা কম থাকার কারণে দামও কমেছে। তবে এ অবস্থায় কত দিন থাকবে তা বলা যাচ্ছে না। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানা এবং বাজারে কতটুকু চিনি আছে তার ওপর নির্ভর করছে আগামীতে দাম কেমন হবে। যদি আমদানি পর্যায়ে চিনি না থাকে তাহলে দ্রুত আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় দাম বাড়তে পারে।’
চিনি ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) ১৭টি কারখানায় চিনি উৎপাদন করা হতো। বর্তমানে ৮ থেকে ৯টি মিলে চিনি উৎপাদন হচ্ছে। আগে যেখানে দেশের এসব মিলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন হতো সেখানে গত বছর চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৩২ হাজার মেট্রিক টনের মতো। দেশে চিনির উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে আমদানি-নির্ভরতা বেড়েছে।’