সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালের আজকের দিনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালনে জাতীয় পার্টির দুটি অংশই ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে এবং উভয় অংশই এরই মধ্যে প্রস্তুতি সভা করেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কুচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তার পরিবার রংপুরে চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে এরশাদ ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেন। এরপর এরশাদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ১৯৫২ সালে।
১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে এরশাদ প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। সেই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এই পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৯১ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গ্রেফতার হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় পাঁচটি করে আসনে জয়ী হয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেন তিনি। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তার দল ২৭টি আসনে জয়ী হয়। এরপর দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালনের মধ্যেই অসুস্থ হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সিএমএইচে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন এবং সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রয়াত চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টি (জি এম কাদের অংশ) আজ রোববার সকাল ৯টায় রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে জাপাসহ এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন। মৃত্যুবার্ষিকীতে কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেল ৩টায় রমনায় ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল হবে; এতে সভাপতিত্ব করবেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
আজ রোববার ঢাকাসহ সারা দেশে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ এবং স্মরণসভাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাকে স্মরণ করবে জাতীয় পার্টি ও দলটির বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠন। দলগৃহীত কর্মসূচিসমূহ যথাযথভাবে পালন করার জন্য নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানিয়েছেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এদিকে, পার্টির রওশন এরশাদের অংশও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজকের দিনে কাকরাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্মরণসভার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন এরশাদের সহধর্মিণী এবং সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এ ছাড়াও বারিধায়ায় এ অংশের অস্থায়ী কার্যালয়ে দিনব্যাপী কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।