ভাষাসৈনিক জওশন আরা রহমান আর নেই ( ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে বেলা সাড়ে ১২টায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি ১৯৫২ সালে ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ একুশের প্রথম কবিতার জনক ভাষাসৈনিক ও কবি মাহাবুব-উল-আলম চৌধুরীর স্ত্রী। তার বাবা ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা রেজিস্টার মাহবুবুর রহমান ও মা সাদীদা খানম। আট ভাইবোনের মধ্যে সপ্তম ছিলেন জওশন আরা রহমান। তার জন্ম চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়ার চুনতী গ্রামের মুন্সেফ বাড়িতে।
জওশন আরা রহমানের ভাগ্নে (বড় বোনের ছেলে) বর্ষন ইসলাম কালবেলাকে বলেছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন। তার জানাজা বাদ মাগরিব রাজধানীর উত্তরা ৩ নং সেক্টর জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বনানী গোরস্তানে স্বামী প্রয়াত ভাষা সংগ্রামী মাহবুব উল আলম চৌধুরীর কবরে তাকে শায়িত করা হবে। সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ধ্রুপদী মানুষ ছিলেন জওশন আরা রহমান। নিজের দেশ, সংস্কৃতি এবং মানুষকে ভালোবেসেছেন।১৯৫২ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে প্রতিভা মুসুৎদ্দীর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে স্বামী ও কন্যাসহ গ্রাম গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। নারীর ক্ষমতায়নে তার অবদান অনেক।
১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক করেন। ১৯৬৪-৬৫ সালে চাকরিরত অবস্থায় নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন শহরে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং ১৯৬৭ সালে ইনটিস্টিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ থেকে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৭৯ সালে জওশন আরা ইউনিসেফের মহিলা কর্মসূচির প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি প্লানিং ও মনিটরিং বিভাগেরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বেইজিং- এ বিশ্বনারী সম্মেলন প্রস্তুতিতে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। সিডও সনদ বাস্তবায়ন ও বেইজিং প্লাটফর্ম ফর অ্যাকশন কার্যকর করার ব্যাপারে জওশন আরা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। ইউনিসেফ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি রয়েল ডেনিস এমবাসির টেকনিক্যাল উপদেষ্টা হিসেবে শিশু অধিকার ফোরামের সঙ্গে কাজ করেন। অবসরে যাওয়ার পূর্বে কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিতে (সিআইডিএ) কর্মরত ছিলেন। গণ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন।
তার লেখা বই বিশ শতকের নারীদের জীবনব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি। তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে আত্মজীবনীমূলক বই ‘অ্যান আননোন উইমেন’, স্মৃতিকথা ‘একটি অজানা মেয়ে’ ইত্যাদি। তার মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্য। গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত ও উন্নয়নে তার অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছে। এছাড়াও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব এবং মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুসহ অনেকেই তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং শোকশন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।