জি-সেভেন এর শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে বিশ্ব নেতাদের গ্যাস আসক্তি থেকে সরে আসা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শহরের সচেতন নাগরিক সমাজ। স্বদেশ, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইডএঊউ) এর যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার (১১জুন) দুপুরে সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের গেটের সামনে এই প্রতীকী বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এসময় বিক্ষোভকারিরা “জীবাশ্ম জ্বলানি আসক্তি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত কর, এলএনজি নয় নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য কাজ করো ও জ্বীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারই হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ, এখান থেকে সরে যাও” লেখা সম্বলিত প্লেকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এসময় বিক্ষোভকারিরা জীবাশ্ম জ্বালানির অর্থায়ন অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানান।
বিক্ষোভে সমাবেশে প্রচারণাকারীদের মধ্যে স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আলনিুর খান বাবুল, ভুমিহিন নেতা কাওসার আলী, আব্দুস সামাদ, নাগরিক নেতা মফিজুল ইসলাম, মহিলা পরিষদের জ্যোৎস্না দত্ত, সাধারন নাগরিক সৈয়দ আজিজুল বারি, কলেজ ছাত্র শুসঙ্কর দাশ, সুজত দেবনাথ, সামিয়া সুলতানা, সাংবাদিক রাহাত রাজা, জয় সরদার, দেবজ্যোতি ঘোষ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ বক্তারা উল্লেখ করেছেন যে, জাপান জি-৭ দেশগুলির মধ্যে একটি, যা বাংলাদেশকে ভুয়া প্রযুক্তি দিয়ে জ্বালানি সংকট সমাধানের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কার্বন সংরক্ষণ প্রযুক্তি, কয়লার সাথে অ্যামোনিয়া ও জীবাশ্ম গ্যাসের সাথে হাইড্রোজেন যুক্ত করে ব্যবহারের মতন ব্যয় বহুল ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রস্তাবনা।
স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, খুলনায় রূপসা ৮০০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল এলএনজি পাওয়ার প্লান্টেও জাপানি বিনিয়োগ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সেলারেট এনার্জি কক্সবাজারের মহেশখালীতে একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করবে, যেটি এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি দেবে, যা জ্বালানি রূপান্তরকে বিলম্বিত করবে। তারা আরো বলেন, এই বিক্ষোভটি বিশ্বজুড়ে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রচারাভিযানের অংশ। বিক্ষোভকারীরা বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের জন্য সমস্ত আর্থিক সহায়তা অবিলম্বে বন্ধ করে “জলবায়ুু অপরাধ” বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। জীবাশ্ম জ্বলানি আসক্তি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
জ্বীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারই হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ এখান সরে যাও। তারা টেকসই এবং ন্যায়সঙ্গত জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত করে এমন নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে তহবিল প্রদান করার জন্যও অনুরোধ করেছেন। প্রসঙ্গত, জি-৭ হলো সাতটি দেশের একটি দল, যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান এবং ইতালি। আগামী ১৩ থেকে ১৫ জুন ইতালিতে ৫০তম জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাদের প্রকাশ্য প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও, জি-৭ দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে এখনও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে, যা জলবায়ু সংকট এবং বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠির ওপর এর প্রভাবকে বাড়িয়ে তুলছে।
সাতক্ষীরায় আয়োজিত এ প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জবাবদিহিতা চেয়ে এবং দ্রুত সংশোধনের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর কাছে তুলে ধরা হয়।