আজ শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
Logo পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত সংঘর্ষে ১৯ সেনা ও ৩ বেসামরিক নিহত Logo অনির্বাচিত সরকারের হাতে দিনের পর দিন দেশ চালাতে দিতে পারি না’ Logo কলারোয়ায় সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনার প্রতিবাদে মতবিনিময় করলেন বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন Logo ইয়েমেনের হুথি ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির নিন্দা জাতিসংঘ মহাসচিবের Logo জাতীয় নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক দল হবে না Logo সংস্কার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়——- ড. ইউনূস Logo আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলায় নিহত ৪৬ Logo সাতক্ষীরায় লটারীতে টিকে থাকা ৭১ শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগের দাবিতে অভিভাবকদের সংবাদ সম্মেলন Logo বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ Logo ভারত থেকে ২৪ হাজার টন চাল আসছে কাল
বিজ্ঞাপন দিন
জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টালে যে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন। মেসার্স রুকাইয়া এড ফার্ম -01971 211241

ব্রিটেন থেকে ভারতে ফিরছে টনকে টন সোনা!

  • রিপোর্টার
  • আপডেট সময়: ০১:০৫:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪
  • ১২১ বার পড়া হয়েছে

গোটা ভারতে এখন আলোচনার বড় বিষয় টনকে টন সোনা। ইংল্যান্ড থেকে ১০০ টনের বেশি সোনা আসছে ভারতে! ভারত শাসনকালে এদেশ থেকে রাশি রাশি সোনা নিয়ে ব্রিটেনে পাড়ি দিয়েছিলেন ইংরেজরা। ১৯০ বছরের পরাধীনতায় ভারত ঠিক কত পরিমাণ সোনা হারিয়েছে, খাতায়-কলমে তার হিসাব নেই। সেই ইংরেজদের দেশ থেকে সোনা ফিরিয়ে আনার খবর সাধারণ মানুষের মনেও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ইংরেজদের নিয়ে যাওয়া সোনাই ভারত ফিরিয়ে আনছে? উত্তর হলো, না। বরং ভারতের জমা রাখা সোনাই ভারত ফিরিয়ে আনছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০০ টন সোনা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ভারতে। নিরাপত্তার জন্য ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডের মাটির নিচে থাকা নয়টি বড় বড় ভল্টে এসব সোনা জমা রেখেছিল ভারত। শুধু ভারতের নয়, বিভিন্ন দেশের সোনাও ওই ভল্টে জমা রয়েছে। কেউ চাইলেই ওই ভল্টে যেতে পারেন না। একমাত্র ইংল্যান্ডের রাজা বা রানিই ওই ভল্টে যেতে পারেন এবং জমা রাখা সোনা দেখতে পারেন।

এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন ভারত সোনা রাখল ইংল্যান্ডের কাছে? যে ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর শোষণ করেছে, তাদের কাছেই সোনা রাখার কী প্রয়োজন পড়ল ভারতের? সেই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে ঘাটতে হবে ইতিহাস। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের মধ্যে এক ধরনের ভীতি জন্ম নিয়েছিল। ধারণা হয়েছিল, ভারতের বাজারে যদি কোনো বিদেশি কোম্পানিকে ব্যবসা করতে দেওয়া হয়, তবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতোই অবস্থা ঘটতে পারে। তাই ভারতের বাজার সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। যা ধীরে ধীরে ভারতকে অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিতে থাকে। এক দিকে ভারতীয় বাজারে বিদেশি সংস্থার ‘নো এন্ট্রি’, অন্যদিকে বিদেশ থেকে বিভিন্ন জিনিস আমদানির কারণে ভারতের আর্থিক ভাণ্ডারে টান পড়তে শুরু করে। রপ্তানির থেকে আমদানির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায়।

ভারত বিদেশ থেকে মূলত তেল আমদানি করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেই এই কারবার চালায় ভারত। ১৯৯১ সালের আগে ভারতে প্রয়োজনীয় তেলের বেশির ভাগ জোগান আসত ইরাক থেকে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ইরাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে ছিল আমেরিকার চোখ রাঙানি। সব মিলিয়ে তেলের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভারতে তেলের সংকট দেখা দেয়। তেল কিনতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ডলারের। এ কারণে বিদেশে ভারতের টাকা চলে না। কীভাবে ডলার পাওয়া যাবে তার পথ খুঁজতে থাকে তৎকালীন সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার (আইএমএফ) এবং বিশ্ব ব্যাংক থেকে ডলার নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না ভারতের। কিন্তু সেখান থেকে ডলার নিতে গেলে মেনে চলতে হতো তাদের দেওয়া শর্ত। অনেকের মতে, আইএমএফ হোক বা বিশ্ব ব্যাংক, নামে স্বতন্ত্র হলেও তাদের ওপর আমেরিকাই ছড়ি ঘোরায়। ভারত সে সময় বিকল্প পথ খুঁজতে থাকে। তখনই সোনা বিদেশি ব্যাংকে রাখার পরিকল্পনা মাথায় আসে সরকারের। তবে আমেরিকার দৃষ্টি এড়িয়ে সোনা অন্য কোনো বিদেশি ব্যাংকে জমা রাখাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।

শোনা যায়, গোপনে সোনা ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এবং ব্যাংক অব জাপানের কাছে জমা রাখে ভারত। তার বিনিময়ে ডলার নেয়। এই পুরো অপারেশনটা ভারত সরকার গোপনে করার চেষ্টা করলেও কয়েকটি সংবাদপত্রে তা ফাঁস হয়ে যায়। বিদেশে জমা রাখা সোনাই ভারতে ফেরানো শুরু হয়েছে। ভারতের কাছে এখন সোনা রয়েছে ৮২২ টন। বিগত পাঁচ বছরে ভারত ২০৩.৯ টন সোনা কিনেছে। তার মধ্যে কিছু মজুত রয়েছে আরবিআইয়ের কাছে। কিছু বিদেশি ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে। শুধু ডলারের বিনিময়ে সোনা বিদেশি ব্যাংকে জমা পড়ত তা-ই নয়। ভারত এমনি সময়েও সোনা বিদেশে রাখে। কেন ভারত সরকার বিদেশি ব্যাংকে সোনা গচ্ছিত রাখে? দেশের মধ্যে বিভিন্ন অস্থিরতার কথা চিন্তা করেই সরকার দেশ থেকে সোনা সরিয়ে রাখে। তা হলে ভারত কেন সোনা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হলো? রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ অনেক দেশই ভ্লাদিমির পুতিনের দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যার ফলে বিদেশি ব্যাংকে রাশিয়ার জমা রাখা সম্পদ আটকে দেওয়া হয়েছে। ভারতও তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

ট্যাগস:

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত সংঘর্ষে ১৯ সেনা ও ৩ বেসামরিক নিহত

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

ব্রিটেন থেকে ভারতে ফিরছে টনকে টন সোনা!

আপডেট সময়: ০১:০৫:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

গোটা ভারতে এখন আলোচনার বড় বিষয় টনকে টন সোনা। ইংল্যান্ড থেকে ১০০ টনের বেশি সোনা আসছে ভারতে! ভারত শাসনকালে এদেশ থেকে রাশি রাশি সোনা নিয়ে ব্রিটেনে পাড়ি দিয়েছিলেন ইংরেজরা। ১৯০ বছরের পরাধীনতায় ভারত ঠিক কত পরিমাণ সোনা হারিয়েছে, খাতায়-কলমে তার হিসাব নেই। সেই ইংরেজদের দেশ থেকে সোনা ফিরিয়ে আনার খবর সাধারণ মানুষের মনেও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ইংরেজদের নিয়ে যাওয়া সোনাই ভারত ফিরিয়ে আনছে? উত্তর হলো, না। বরং ভারতের জমা রাখা সোনাই ভারত ফিরিয়ে আনছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০০ টন সোনা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ভারতে। নিরাপত্তার জন্য ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডের মাটির নিচে থাকা নয়টি বড় বড় ভল্টে এসব সোনা জমা রেখেছিল ভারত। শুধু ভারতের নয়, বিভিন্ন দেশের সোনাও ওই ভল্টে জমা রয়েছে। কেউ চাইলেই ওই ভল্টে যেতে পারেন না। একমাত্র ইংল্যান্ডের রাজা বা রানিই ওই ভল্টে যেতে পারেন এবং জমা রাখা সোনা দেখতে পারেন।

এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন ভারত সোনা রাখল ইংল্যান্ডের কাছে? যে ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর শোষণ করেছে, তাদের কাছেই সোনা রাখার কী প্রয়োজন পড়ল ভারতের? সেই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে ঘাটতে হবে ইতিহাস। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের মধ্যে এক ধরনের ভীতি জন্ম নিয়েছিল। ধারণা হয়েছিল, ভারতের বাজারে যদি কোনো বিদেশি কোম্পানিকে ব্যবসা করতে দেওয়া হয়, তবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতোই অবস্থা ঘটতে পারে। তাই ভারতের বাজার সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। যা ধীরে ধীরে ভারতকে অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিতে থাকে। এক দিকে ভারতীয় বাজারে বিদেশি সংস্থার ‘নো এন্ট্রি’, অন্যদিকে বিদেশ থেকে বিভিন্ন জিনিস আমদানির কারণে ভারতের আর্থিক ভাণ্ডারে টান পড়তে শুরু করে। রপ্তানির থেকে আমদানির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায়।

ভারত বিদেশ থেকে মূলত তেল আমদানি করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেই এই কারবার চালায় ভারত। ১৯৯১ সালের আগে ভারতে প্রয়োজনীয় তেলের বেশির ভাগ জোগান আসত ইরাক থেকে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ইরাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে ছিল আমেরিকার চোখ রাঙানি। সব মিলিয়ে তেলের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভারতে তেলের সংকট দেখা দেয়। তেল কিনতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ডলারের। এ কারণে বিদেশে ভারতের টাকা চলে না। কীভাবে ডলার পাওয়া যাবে তার পথ খুঁজতে থাকে তৎকালীন সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার (আইএমএফ) এবং বিশ্ব ব্যাংক থেকে ডলার নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না ভারতের। কিন্তু সেখান থেকে ডলার নিতে গেলে মেনে চলতে হতো তাদের দেওয়া শর্ত। অনেকের মতে, আইএমএফ হোক বা বিশ্ব ব্যাংক, নামে স্বতন্ত্র হলেও তাদের ওপর আমেরিকাই ছড়ি ঘোরায়। ভারত সে সময় বিকল্প পথ খুঁজতে থাকে। তখনই সোনা বিদেশি ব্যাংকে রাখার পরিকল্পনা মাথায় আসে সরকারের। তবে আমেরিকার দৃষ্টি এড়িয়ে সোনা অন্য কোনো বিদেশি ব্যাংকে জমা রাখাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।

শোনা যায়, গোপনে সোনা ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এবং ব্যাংক অব জাপানের কাছে জমা রাখে ভারত। তার বিনিময়ে ডলার নেয়। এই পুরো অপারেশনটা ভারত সরকার গোপনে করার চেষ্টা করলেও কয়েকটি সংবাদপত্রে তা ফাঁস হয়ে যায়। বিদেশে জমা রাখা সোনাই ভারতে ফেরানো শুরু হয়েছে। ভারতের কাছে এখন সোনা রয়েছে ৮২২ টন। বিগত পাঁচ বছরে ভারত ২০৩.৯ টন সোনা কিনেছে। তার মধ্যে কিছু মজুত রয়েছে আরবিআইয়ের কাছে। কিছু বিদেশি ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে। শুধু ডলারের বিনিময়ে সোনা বিদেশি ব্যাংকে জমা পড়ত তা-ই নয়। ভারত এমনি সময়েও সোনা বিদেশে রাখে। কেন ভারত সরকার বিদেশি ব্যাংকে সোনা গচ্ছিত রাখে? দেশের মধ্যে বিভিন্ন অস্থিরতার কথা চিন্তা করেই সরকার দেশ থেকে সোনা সরিয়ে রাখে। তা হলে ভারত কেন সোনা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হলো? রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ অনেক দেশই ভ্লাদিমির পুতিনের দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যার ফলে বিদেশি ব্যাংকে রাশিয়ার জমা রাখা সম্পদ আটকে দেওয়া হয়েছে। ভারতও তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।