আগামী মাসের রোববার (২ জুন) সকাল সাড়ে ৬টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে শুরু হবে পুরুষদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিশ্বে ফুটবলের সাথে জনপ্রিয়তায় ক্রিকেট এমনিতেই অনেক পিছিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তো কথাই নেই। ক্রিকেট খেলা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের জনপ্রিয় ১০ খেলার মধ্যেও নেই। তবে পাঠকরা সম্ভবত জানেন না যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই হয়েছিল ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচ। তাই সময় এসেছে মার্কিন মুলুকে ক্রিকেটের আকর্ষণীয় ইতিহাসে নজর দেওয়ার। একটি সাধারণ ক্রিকেট কুইজ প্রশ্ন অনেককে বিভ্রান্ত করেছে: কোন দুটি দেশে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল? সাধারণত সবাই বলবে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার কথা। তবে এই ধারণাটি ভুল। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক ম্যাচটি ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৪৪ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যে মাঠে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় সেখানে এখন ম্যানহাটনের প্রথম এভিনিউ এবং ইস্ট ৩১ স্ট্রিট। সেই সময়ের এই ম্যাচটি প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিসেবে অনেক জায়গায় স্বীকৃত। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচটি আমেরিকা কাপেরও সাত বছর পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ম্যাচটি প্রাথমিকভাবে দুই দিনের জন্য নির্ধারিত ছিল কিন্তু বৃষ্টির কারণে তিন দিন ধরে চলে। সেন্ট জর্জেস ক্লাবের মাঠের প্রথম দিনে প্রায় ৫,০০০ জন মানুষের সমাগম হয় এবং ম্যাচজুড়ে প্রায় ১০০,০০০ ডলারের বাজি ধরা হয় আজকের দিনে যার মূল্যমান প্রায় ৪.২ মিলিয়ন ডলার। কানাডা, তাদের দুর্গম দেশ থেকে সমুদ্র পথে একটি কষ্টকর যাত্রার পর প্রথমে ব্যাট করে এবং ৮২ রান সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে জন্মানো দুই খেলোয়াড়, স্যাম রাইট এবং হ্যারি গ্রুম দ্বারা পরিচালিত হয়। ডেভিড উইনকওর্থ কানাডার হয়ে সর্বোচ্চ ১২ রান করেন। বোলিংয়েও তার চারটি উইকেট আমেরিকানদের ৬৪ রানে আউট করতে সহায়তা করে। তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে, কানাডা আরও ৬৩ রান যোগ করে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট দাঁড়ায় ৮২ রানের। যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী শুরু করে ওপেনার জেমস টার্নার এবং জন সাইমের সৌজন্যে। তাদের ২৫ রান যুক্তরাষ্ট্রকে জয়ের বন্দরে রাখলেও একটি নাটকীয় পতন ঘটে, জর্জ শার্প মাত্র ১১ রানে ছয়টি উইকেট নেন। অন্যদিকে রহস্যজনকভাবে আমেরিকান ব্যাটসম্যান জর্জ উইটক্রফটের অনুপস্থিতি তাদের দুর্ভোগ বাড়ায়।
উইটক্রফট শেষ উইকেট পড়ার ২০ মিনিট পরে মাঠে আসেন এবং খেলা পুনরায় শুরু করার জন্য কানাডার খেলোয়াড়দের সাথে তর্ক জুড়ে দেন। তবে কানাডা না টলায় প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২৩ রানে জয়ী হয় তারা। এই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলতে থাকে পরবর্তী বছরগুলোতেও। পরের বছরের হোম এবয় অ্যাওয়ে উভয় ম্যাচই কানাডা জিতেছিল। ১৮৪৬ সালে হারলেমে একটি ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে জয়ের দেখা পায়। এই ম্যাচে খেলোয়াড়দের মধ্যে হাতাহাতির ফলে সাত বছরের জন্য স্থগিত করা হয় ক্রিকেট। সেই কাণ্ডের মূল হোতা ছিল অবশ্য ডেভিড উইনকওর্থ, যিনি কানাডার হয়ে প্রথম তিনটি ম্যাচে খেলেছিলেন এবং পরে ১৮৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলেন। এই সমৃদ্ধ ইতিহাস হয়তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হলো তার একটি উত্তর দিবে ক্রিকেট ভক্তদের। আসা করা যায় আসন্ন এই বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্রে খেলাটির গভীর শিকড়কে আবার তুলে ধরবে।