দুনিয়ার বুকে আল্লাহ তায়ালার অনন্য কুদরত জমজম কূপ। মসজিদুল হারামের ভেতর পবিত্র কাবাঘরের ২০ মিটার পূর্বে এই কূপের অবস্থান। ধারণা করা হয়, প্রায় ৪ হাজার বছর আগে এই কূপের উৎপত্তি। ইব্রাহিম (আ.) ও তার ছেলে ইসমাইল (আ.) এর সঙ্গে জমজম কূপের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। তবে কালের বিবর্তনে জমজম কূপের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। পরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব স্বপ্নযোগে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে এই কূপ পুনর্খনন করেন। জমজম কূপের পানির স্তর ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১০.৬ ফুট নিচে। এখান থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৮ হাজার লিটার হারে পানি তোলা হয়। পানির স্তর ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৪৪ ফুট নিচে নেমে গেলে পানি তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন পানির স্তর মাত্র ১১ মিনিটে আবার ১৩ ফুট উচ্চতায় ফিরে আসে। জমজম কূপ থেকে প্রতি ঘণ্টায় ২৮.৮ মিলিয়ন লিটার ও প্রতিদিন ৬৯১.২ মিলিয়ন লিটার পানি উত্তোলন করা হয়।
এ পর্যন্ত দুইবার জমজম কূপ পরিষ্কার করা হয়েছে। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ খালিদের নির্দেশে পেশাদার ডুবুরিদের কূপের ভেতর পাঠানো হয় দুইবারই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সৌদির একজন একাডেমিক ড. ইয়াহইয়া খোশাক। ডুবুরিরা টর্চলাইট নিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো কূপের ভেতর অবস্থান করেন। সেখানে তারা দেখতে পান, কূপের গভীরতা ১৯ দশমিক ২ থেকে ১৯ দশমিক ৮ মিটার পর্যন্ত। এর মধ্যে ৯ মিটার পর্যন্ত প্লাস্টার করা। প্লাস্টার করা অংশের নিচে পানির মধ্যে কম্পাসের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যায়। একেবারে নিচে নেমে তারা ধাতব বালতিসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত জিনিস দেখতে পান। কূপের আশপাশ থেকে সাবমারসিবল পাম্প দিয়ে উত্তোলন করা হয়। এতে কূপের ভেতর পানির স্তর ৫ মিটারে নেমে আসে। তখনই কয়েক মিনিটের জন্য পানির উৎস দেখতে পেরেছিলেন ডুবুরিরা। পরে জমজম কূপের পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, জমজম কূপের পানিতে কোনো দূষণ বা ব্যাকটেরিয়া নেই।
জমজম কূপের পানির কোনো রঙ বা গন্ধ নেই। তবে এর বিশেষ স্বাদ রয়েছে। কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় জমজম কূপের পানি পরীক্ষা করেছে এবং তারা এর পুষ্টিগুণ ও উপাদানগুলো নির্ণয় করেছে। জমজম পানির উপাদানগুলো হলো- প্রতি লিটারে আছে সোডিয়াম ১৩৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯৬ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৩৮.৮৮ মিলিগ্রাম, ফ্লোরাইড ০.৭২ মিলিগ্রাম, নাইট্রেট ১২৪.৮ মিলিগ্রাম, সালফেট ১২৪ মিলিগ্রাম। জমজম কূপের বিভিন্ন ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) জমজমের পানি সম্পর্কে বলেছেন যে, জমজমের পানি হচ্ছে বরকতময় ও তৃপ্তিদায়ক।’ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর সর্বোত্তম পানি হচ্ছে জমজম। প্রতি বছর লাখ লাখ হাজি জমজম কূপ থেকে পানি নিয়ে আসেন। কিন্তু কখনও পানির স্বল্পতা দেখা যায়নি। তাই জমজম কূপ মানুষের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর এক অপূর্ব নেয়ামত ও বরকতময় উপহার বলে মনে করা হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও এই পানির উপকারিতা প্রমাণিত।