প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মানবাবিধকার প্রতিবেদনে তা স্বীকার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহলী সাবরীন। তিনি বলেন, সেটা না করে দেশটির প্রতিবেদনে অনেক বিচ্ছিন্ন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিমত তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০২৩ সালের যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নোট করেছে বাংলাদেশ। আমরা যতই আকাঙ্ক্ষা করি না কেন বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। কারণ, একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, তবে যেসব ক্ষেত্রগুলোয় আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা আসার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে।’
মুখপাত্র বলেন, সরকারের প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, বয়স্ক ব্যক্তিদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সমাবেশ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এত অর্জন সত্ত্বেত্ত দুঃখের বিষয় মার্কিন প্রতিবেদনে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন স্বীকার করা হয়নি। এ ছাড়া কিছু বিচ্ছিন্ন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে, এটি পৃথক রিপোর্ট করা বা অভিযুক্ত ঘটনার রেফারেন্স দিয়ে পরিপূর্ণ নয়। তিনি আরও বলেন, এটাও স্পষ্ট, প্রতিবেদনে বেশিরভাগ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি বেনামি সংস্থা থেকে অনুমান নির্ভর তথ্য নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে। সে কারণে প্রতিবেদনে সহজাত এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে। মার্কিন প্রতিবেদনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, খালেদা জিয়া গৃহবন্দি নন।
মুখপাত্র বলেন, প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এটি সঠিক নয়। কারণ, বিএনপি এবং এর রাজনৈতিক মিত্রদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা ও ভাঙচুরকে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা প্রায়শই সাধারণ মানুষের জীবনকে ব্যাহত করে এবং সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করে। এত কিছুর পরও বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অত্যন্ত সংযম প্রদর্শন করেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। সেহেলী সাবরীন বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক, মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক সংলাপ থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেদনে এই বিষয়ে রাষ্ট্র/সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে ছাড়িয়ে বারবার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অনুরূপ শ্রম অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন এবং ক্রিয়াকলাপের বিষয়ে প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি কেস পতাকাঙ্কিত করা হয়েছে, যেগুলো একাধিক দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে প্রাসঙ্গিক মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি মূল্যবান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নোট করেছে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার এবং স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে সকল নাগরিকের মানবাধিকারের সম্পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে সম্পৃক্ত থাকার জন্য উন্মুখ। সেহেলী সাবরীন আরও বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বাহিনী দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বাংলাদেশ আশা করে, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে।