সংসদ ভবন, পুরাতন বিমানবন্দর, চন্দ্রিমা উদ্যান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন এবং বঙ্গভবনসহ রাজধানীর ভিভিআইপি ও স্পর্শকাতর এলাকায় ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ। নববর্ষ উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সড়কে আঁকা আল্পনার ছবি ও ভিডিও করতে গত ১৫ এপ্রিল স্পর্শকাতর এই এলাকায় ড্রোন উড়িয়ে বিপাকে পড়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য এইচএম গোলাম রেজার ছেলে হোসেন মোহাম্মদ মায়াজ (২৮)। শেরেবাংলা থানা পুলিশ তাকে আটক করে। পরে অবশ্য এ ঘটনায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। ড্রোন ওড়ানো প্রসঙ্গে হোসেন মোহাম্মদ মায়াজ বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আঁকা আলপনার একটি ভিডিওগ্রাফি ও ছবি তোলার জন্য তিনি পূর্ব অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত ড্রোন MAVIC AIR-3 ব্যবহার করেন এবং এটি তার অনীচ্ছাকৃত ভুল। এলাকাটি রেস্ট্রিক্টেড এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সচেতন থাকা উচিত ছিল জানিয়ে নিজের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
আইনের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থাকবেন জানিয়ে এই ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে আর কখনো করবেন না বলেও অঙ্গীকার করেন মায়াজ। নিরাপত্তার জন্য পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আছে। বিশেষ করে রেড জোনে ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ। আইন অনুযায়ী দেশের আকাশ সীমায় ড্রোন, রিমোটলি পাইলটেড এয়ারক্রাফট সিস্টেম, রিমোট কন্ট্রোলড খেলনা বিমান, ঘুড়ি ও লেজার রশ্মি ব্যবহারে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এজন্য একটি নির্দিষ্ট সময় আগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ওয়েব সাইটে (www.caab.gov.bd) দেওয়া ফরম অনুযায়ী পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে। সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) অনুমতি ছাড়া ড্রোন না ওড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, সম্প্রতি কিছু উৎসাহী ব্যক্তি, বেসামরিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিনা অনুমতিতে বাংলাদেশের আকাশ সীমায় ড্রোন, রিমোটলি পাইলটেড এয়ারক্রাফট সিস্টেম (ইউএভি/আরপিএএস), রিমোট কন্ট্রোলড খেলনা বিমান, ঘুড়ি ও ফানুস ইত্যাদি উড্ডয়ন করছেন। জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের অননুমোদিত উড্ডয়ন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
রেড জোনে ড্রোন উড্ডয়ন বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও ডিভিশনের মোহাম্মদপুর জোনের এডিসি মো. রওশানুল হক সৈকত বলেন, নিরাপত্তার জন্য পৃথিবীর সব দেশেই স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আছে। আমাদের দেশেও স্পর্শকাতর এলাকায় ড্রোন ওড়ানো নিষেধ। এটা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের নিরাপত্তার জন্য জরুরি। বঙ্গভবন, গণভবন, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিমানবন্দর, চন্দ্রিমা উদ্যানসহ রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ড্রোন ওড়ানো থেকে সবাইকে বিরত থাকা জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি সবাই এ বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকবেন।
এডিসি সৈকত আরও বলেন, বাংলাদেশে ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০২০ অনুযায়ী ড্রোন অপারেশন জোন রয়েছে, যেখানে রেড জোনে ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ। বিমানবন্দর বা বিশেষ কেপিআই রেড জোনের মধ্যে পড়েছে। বিশেষ অনুমতি ছাড়া রেড জোনে ড্রোন ওড়ানো যাবে না; এ বিষয়ে সকলেরই সচেতন হওয়া জরুরি। যে কোনো দেশের রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সঙ্গে কেপিআইয়ের নিরাপত্তা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।